সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: অজ্ঞাত নাম-পরিচয়ের কিছু মানুষকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সীমান্তের ওপারে! হ্যাঁ, এমনই দৃশ্য চোখে পড়ল অসমে (Assam)। কিন্তু কেন? ভারতের দিক থেকে একে বলা হচ্ছে পুশ ব্যাক, আবার ওপার বাংলার দিক থেকে বলা হচ্ছে পুশ ইন। আর এখানেই এবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নতুন বিতর্ক।
1950 সালের পুরনো আইন আলোচনার শিরোনামে
সম্প্রতি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণা করে বসেছেন। তিনি দাবি করছেন যে, 1950 সালে তৈরি অভিবাসী নির্দেশ এখনো বলবৎ রয়েছে। আর সেই আইন অনুযায়ী জেলার জেলাশাসক কাউকে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করার আগে সরাসরি বহিষ্কারের নির্দেশও দিতে পারে। এমনকি আদালতের রায়েরও কোনোরকম প্রয়োজন পড়ে না।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরো জানান, আমরা এতদিন জানতামই না যে, এই আইনের এমন একটি ধারা রয়েছে। এখন থেকে আর কোন ট্রাইব্যুনাল নয়, বরং যেখানে আদালতের রায় নেই, সেখানে সরাসরি পুশ ব্যাক করে দেওয়া হবে।
তবে এই ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে অসমের রাজনৈতিক থেকে প্রশাসনিক মহল। অনেকেই মনে করছে, এই পদ্ধতি বিচার ব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলেছেন, এই আইন 1950 সালে পাকিস্তানের আমলে হয়েছিল। এখন এই আইনের দোহাই দিয়ে কাউকে এভাবে ফেরত পাঠানো যায় না। এটি সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী।
তিনি আরো জানান, আদালতকে এড়িয়ে ট্রাইব্যুনালের রায় ছাড়া সরাসরি এক্সিকিউটিভ অর্ডারে কাউকে ওপার বাংলায় ফেরত পাঠানো যাবে না। কারণ একজন মানুষ যদি বিদেশী হিসেবে আদালতের রায়ে কোনোভাবে চিহ্নিত না হয়, তাহলে তাকে পুশ ব্যাক করার মানে তা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
আরও পড়ুনঃ ভারতে যাবেন না! বাংলাদেশিদের জন্য কড়া নির্দেশিকা জারি ইউনূসের
সুপ্রিম কোর্টে ভিন্ন ছবি
এদিকে বিতর্কের দানা বেঁধেছে অন্য একটি বিষয় নিয়ে। 2018 সালে সুপ্রিম কোর্টের এক মামলায় আসাম সরকার নিজেই জানিয়েছিল যে, 2013 সালের পর আর কোনোরকম পুশ ব্যাক করা হবে না। সবটাই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার অংশ ছিল। তবে হঠাৎ করে পুরনো আইন বার করে এনে প্রশাসনের তরফ থেকে আবার পুশ ব্যাক দেওয়া কি পূর্ব প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার নয়? এ নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সরকার বলছে, যাদের বিরুদ্ধে এরকম কোনও মামলা নেই, বা ট্রাইব্যুনালে যাওয়া হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে এই আইন ব্যবহার করা যাবে। তবে বাস্তবে কোনও অভিযুক্তির পক্ষেই এরকম মামলা দায়ের নেই। এমনকি মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এই নতুন পথে বিদেশী চিহ্নিত করার নামে নিরাপদ হয়রানির ঝুঁকি আরো বাড়বে। এখন দেখার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।