কলকাতাঃ যত সময় এগোচ্ছে ততই যেন ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়ার হিড়িক বাড়ছে দেশবাসীর মধ্যে। কি শুনে চমকে গেলেন তো ? কিন্তু এটাই একদম সত্যি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজ্যের মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং নিজেদের পাসপোর্টও সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এবার এই তালিকায় সংযোজন হল আরও এক রাজ্যের। আপনিও কি জানতে ইচ্ছুক এবার কোন রাজ্যের মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব ছাড়তে চাইছেন? তাহলে বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই লেখাটির ওপর।
দেশ ছাড়ার হিড়িক এই রাজ্যবাসীর
দিল্লি, পাঞ্জাবের পর এবার গুজরাটের বহু মানুষের মধ্যে নাগরিকত্ব ছাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আর এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই দেশের সরকারের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুজরাটে বসবাসকারীদের ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে বিদেশে বসবাসের ঘটনা বাড়ছে। জানলে অবাক হবেন, গত এক বছরে পাসপোর্ট সমর্পণকারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ১,১৮৭ জন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এরপর ২০২৩ সালে ৪৮৫ জন নিজেদের পাসপোর্ট সরকারের ঘরে সমর্পণ করেছে, যা ২০২২ সালে আত্মসমর্পণ করা ২৪১টি পাসপোর্টের দ্বিগুণ।
এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, উৎপল প্যাটেল নামে এক ব্যক্তি ২০১১ সালে আহমেদাবাদ ছেড়ে চলে যান। তিনি উত্তর কানাডায় পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন এবং ২০২২ সালের মধ্যে উৎপল কানাডার নাগরিকত্ব নেন এবং ২০২৩ সালের মধ্যে তার ভারতীয় পাসপোর্ট সমর্পণ করেন। এরকম উৎপলের মতো আরও বহু মানুষ এমন রয়েছেন, বিশেষ করে গুজরাটিদের মধ্যে এই ভারত ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করার তীব্র প্রবণতা বেড়েছে।
সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
গুজরাট রাজ্য পরিচালনাকারী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের তথ্য অনুসারে, গুজরাটিদের ভারতীয় পাসপোর্ট ত্যাগ করার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে ২৪৪ জন ভারতের পাসপোর্ট ত্যাগ করেন। কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে আত্মসমর্পণ করা বেশিরভাগ পাসপোর্ট ৩০-৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ছিল। বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক।
সংসদের তরফে তুলে ধরা তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটের ২২,৩০০ জন মানুষ ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তাদের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এছাড়া দিল্লিতে ৬০,৪১৪ জন এবং পাঞ্জাবে ২৮,১১৭ জন ত্যাগ করেছেন। কোভিড পরবর্তী সময়ে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আহমেদাবাদের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসার অভিজিৎ শুক্লা জানিয়েছেন যে দুই বছরের মহামারী বিধিনিষেধের পরে দূতাবাসগুলি পুনরায় চালু করা এবং নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক তরুণ পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফলে পাসপোর্ট জমা বেশিরভাগই দিয়েছেন পড়ুয়ারা। বিনিয়োগকারী ভিসা পরামর্শদাতা ললিত আডভানি বিনিয়োগকারী ভিসার জন্য ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘ভারতের থেকে উন্নত অবকাঠামো ও জীবনযাত্রার মানের জন্য অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এমনকি ভারতে উচ্চ জীবনযাত্রার মান সহ সবুজ জায়গার অভাব এবং খারাপ ড্রাইভিং অবস্থার কারণে অনেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। আহমেদাবাদ-সহ গুজরাটের শহরগুলি পথচারীবান্ধব নয়।’ অর্থাৎ গুজরাটের খারাপ রাস্তা অন্যতম বড় কারণ গুজরাটিদের ভারত ত্যাগের ক্ষেত্রে।
হু হু করে বাড়ছে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা
পাসপোর্ট কনসালট্যান্ট রিতেশ দেশাই বলেন, ‘ভিসার প্রধান তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে- স্টুডেন্ট, ডাইরেক্ট ইমিগ্রেশন ও ব্যবসা। ২০১২ সাল থেকে বিদেশে যেতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বিশেষ করে ২০১৩-২০১৪ সালের পর। আমার মনে হয় আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে পাসপোর্ট সমর্পণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে কারণ বিদেশে চলে যাওয়া আরও বেশি লোক এখন তাদের বিদেশী নাগরিকত্ব অর্জন করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়িক ভিসার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা খুবই সীমিত, কারণ প্রতিটি দেশেই এ ধরনের ভিসার জন্য কোটা রয়েছে। আমার এক বন্ধু ২০১৮ সালে EB5 ভিসার জন্য আবেদন করেছিল, বিদেশে ৪ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ দেখিয়ে সে আবেদন করেছিল। প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নাগরিকত্বের দাবিতে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি। যাদের উল্লেখযোগ্য তহবিল রয়েছে কেবল তারাই ব্যবসায়িক ভিসার জন্য আবেদন করেন।’