সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে চলা বিতর্কে এবার বিরাট রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court on Waqf Act)। আজ অর্থাৎ সোমবার প্রধান বিচারপতি বি.আর. গভাই এবং বিচারপতি এ.জি. মসিহর বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, গোটা ওয়াকফ আইন স্থগিত রাখা যাবে না। কিন্তু বিতর্কিত কিছু ধারার উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে।
কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট?
আসলে আদালতে একাধিক পিটিশনে দাবি উঠেছিল যে, পুরনো ওয়াকফ আইনকে স্থগিত করা হোক। কিন্তু শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, সম্পূর্ণ আইনের বিরুদ্ধে কোনও গুরুতর কারণ পাওয়া যায়নি। তবে কিছু ধারায় সামান্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সে কারণেই অন্তর্বর্তী সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেঞ্চ এদিন স্পষ্ট বলে দিয়েছে, গোটা আইনটিকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে, বিশেষ করে ৩(আর), ৩সি, ১৪ ধারা নিয়ে কিছু গলদ থাকছে। তাই এই ধারাগুলোর উপর আপাতত স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে।
কোন ধারাগুলিতে স্থগিতাদেশ?
রিপোর্ট অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মোট পাঁচটি ক্ষেত্রে আপাতত স্থগিতাদেশ থাকছে—
- প্রথমত, সরকারি জমি ওয়াকফের নামে অধিগ্রহণ রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য সরকারি অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
- দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় স্তরে ও ওয়াকফ কমিটিতে কমপক্ষে চারজন অ-মুসলিম এবং রাজ্য স্তরের কমিটিতে কমপক্ষে তিনজন অ-মুসলিমকে রাখার উপর স্থগিত দেওয়া হয়েছে।
- তৃতীয়ত, সংশোধনী আইন অনুযায়ী নতুন ওয়াকফ কমিটিতে যে সমস্ত সরকারি অফিসার নিযুক্ত হবে, তাদেরকে অবশ্যই অ-মুসলিম হতে হবে। আদালত এই আইনের ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
- চতুর্থত, ওয়াকফ আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি ওয়াকফ সম্পত্তি দান করতে চাইলে তাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালন করতে হবে। আইনের এই ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
- পঞ্চমত, সংশোধনী আইন অনুযায়ী সরকার নিয়োজিত অফিসার ওয়াকফ বোর্ডের রেভিনিউ রেকর্ড খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে। এই আইনের উপরও স্থগিতাদেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুনঃ মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা! ঝাড়খণ্ডে খতম কুখ্যাত মাওবাদী নেতা সহদেব সোরেন সহ ৩
তাহলে মূল বিতর্ক কোথায?
আসলে ওয়াকফ সংশোধনী আইনে বলা হয়েছিল যে, যদি কেউ ওয়াকফ প্রতিষ্ঠা বা সম্পত্তি দান করতে চায়, তাহলে তাঁকে ন্যূনতম পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের নিয়োজিত একজন অফিসার এই বিষয়টিকে তদন্ত করেই রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হবে না। এর পাশাপাশি সংশোধনীতে অ-মুসলিম সদস্য এবং অফিসার নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও সমস্যা ছিল। এই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করেও মূলত ওয়াকফ আইনের বিতর্ক।