বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: পাকিস্তানি বলে সম্মোধন করা কুরুচির পরিচয় দিলেও তা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় না, মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme court)। এদিন বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ জানিয়েছে, কোনও ব্যক্তিকে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ে সম্মোধন করা, পাকিস্তানি বা মিঞা-টিঞা অথবা মিয়া বলে ডাকা সম্পূর্ণ কুরুচির পরিচয়। তবে এটি কখনই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার মতো অপরাধ নয়।
পাকিস্তানি সম্বোধনে আপত্তি নেই আদালতের?
সোমবার শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ জানিয়েছে, সাধারণত পাকিস্তানি বা মিয়া বলে কাউকে সম্মোধন করা হলে তা সরাসরি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে বলে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। তবে এই ধরনের সম্মোধন নিঃসন্দেহে নিম্ন রুচির পরিচয়। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও ব্যক্তিকে তার জাতি অথবা ধর্মীয় পরিচয়ে ডাকা হলে তা অবশ্যই নিম্ন রুচির প্রকাশ তবে এই ধরনের সম্বোধন কোনও ভাবেই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে না।
শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির 298 ধারায় ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের মতো বিষয়গুলির বিভিন্ন পর্যায় দেওয়া রয়েছে। তবে কাউকে পাকিস্তানি কিংবা মিয়া বলে সম্মোধনের ঘটনাগুলি এই ধারার অন্তর্ভুক্ত নয়। সূত্রের খবর, বার অ্যান্ড বেঞ্চ অনুযায়ী, কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা এক সরকারি কর্মীকে, পাকিস্তানি বলে ডেকেছিলেন কোনও এক অভিযুক্ত ব্যক্তি। আর সেই ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই আদালতে দায়ের করা হয় মামলা। সেই মামলার শুনানি চলাকালীন ধর্মীয় পরিচয়ে কুরুচিকর সম্বোধন নিয়ে বড়সড় মন্তব্য শোনাল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
মামলা রুজু হওয়ার নেপথ্যে বড় কারণ
সূত্রের খবর, মামলাকারি তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত দফতরে উর্দু অনুবাদক হিসেবে কাজ করতেন। জানা যায়, তথ্যের অধিকার আইনের আশ্রয়ে এক অভিযুক্ত ব্যক্তি বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তির আবেদন অনুযায়ী তাকে যাবতীয় তথ্য জানানো হলে তিনি সেই তথ্যে সন্তুষ্ট হননি। অভিযুক্তের সন্দেহ ছিল হয়তো এক্ষেত্রে কোনও রকম কারচুপি হচ্ছে। নথিতে বেশ কিছু ভুল রয়েছে। আর এর পরই সন্দেহের বশে ফের আবেদন করেন তিনি।
এরপরই ওই সরকারি কর্মীকে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে যাবতীয় নথি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেইমতো অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে নথি পৌঁছে দিতে যান মামলাকরি। মামলাকারি ব্যক্তির অভিযোগ, প্রথমে নথি চাইলেও পরবর্তীতে সেই নদী নিতে রাজি হননি ওই অভিযুক্ত। শুধু তাই নয়, তাঁকে যাবতীয় প্রমাণপত্র দিতে গেলে ওই ব্যক্তি মামলাকারিকে অশ্রাব্য ভাষায় বেশ কিছু কটুক্তি করেন বলেই অভিযোগ।
অবশ্যই পড়ুন: ভুতুড়ে ভোটার খোদ তৃণমূল নেত্রীই! দু’জায়গায় নাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির
একই সাথে কর্তব্যরত সরকারি ব্যক্তির ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে কটুক্তি ও হুমকির বিপক্ষে মামলা রুজু হয় শীর্ষ আদালতে। তবে মামলা দুই বিচারপতির এজ্লাসে উঠতেই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দেয় আদালত। একই সাথে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে কটুক্তি করার অভিযোগও ধোপে টেকেনি সুপ্রিম কোর্টে।