ইন্ডিয়া হুড ডেস্কঃ ক্ষমতায় এসেই একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। একাধিক আইন বাস্তবায়িত করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তিনটি নতুন আইন বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। কোন তিনটি লাইন লাগু করা হচ্ছে, কী বলা রয়েছে এই আইনগুলোতে? চলুন জেনে নেওয়া যাক। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো, নতুন আইন ১ জুলাইয়ের আগে রুজু হওয়া মামলাগুলিকে প্রভাবিত করবে না। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার পর্যন্ত যে সব মামলা নথিভুক্ত হয়েছে, সেগুলো পুরনো আইনের মাধ্যমেই বিচার করা হবে।
৩ আইন নিয়ে কড়া কেন্দ্র
১ জুলাই থেকে নতুন আইন কার্যকর করা হয়েছে। এফআইএর মাধ্যমেই শুরু হবে প্রাথমিক তদন্ত। BNSS-এ মোট ৫৩১টি বিভাগ রয়েছে। এর ১৭৭টি বিধান সংশোধন করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৪টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। ৯টি নতুন ধারা ও ৩৯টি উপধারা সংযোজন করা হয়েছে। এর আগে CrPC-তে ৪৮৪টি ধারা ছিল। ভারতীয় বিচারবিধিতে মোট ৩৫৭টি ধারা রয়েছে। আইপিসি-তে ৫১১টি ধারা ছিল। ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে মোট ১৭০টি ধারা রয়েছে। নতুন আইনে ৬টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। ২টি নতুন ধারা ও ৬টি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে মোট ১৬৭টি ধারা ছিল। নতুন আইনে অডিও-ভিডিও অর্থাৎ ইলেকট্রনিক এভিডমেন্টের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ফরেনসিক তদন্তের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
IPC-র দিন শেষ
যে কোনও নাগরিক এই অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও জায়গায় এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। মামলাটি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হবে। যদি ‘জিরো এফআইআর’ এমন কোনও অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় যেখানে তিন থেকে সাত বছরের সাজার নিয়ম রয়েছে, তাহলে প্রমাণগুলি ফরেনসিক টিম দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে। এখন ই-তথ্য দিয়েও এফআইআর নথিভুক্ত করা যাবে।
খুন, ডাকাতি বা ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধরের ক্ষেত্রেও ই-এফআইআর দায়ের করা যাবে। ভয়েস রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমেও পুলিশকে অভিযোগ জানানো যাবে। ই-এফআইআরের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে তিন দিনের মধ্যে থানায় পৌঁছে এফআইআর কপিতে স্বাক্ষর করতে হবে। এফআইআর সংক্রান্ত নথি, অভিযোগকারীর বয়ান দেওয়ার নিয়মও রাখা হয়েছে। অভিযোগকারী ইচ্ছে করলে পুলিশের মাধ্যমে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারেও আবেদন করতে পারবেন।
এফআইআরের ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে হবে। চার্জশিট দাখিলের ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগ তুলে ধরতে হবে আদালতে। মামলার শুনানি শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রায় নিশ্চিত করতে হবে। আটক ব্যক্তির পরিবারকে আটক ব্যক্তির বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে হবে পুলিশকে। অফলাইন ও অনলাইনেও তথ্য দিতে হবে। বিএনএসে মোট ৩৬টি ধারায় নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিধান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের মামলা ৬৩ ধারায় রুজু করা হবে। ৬৪ ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ১০ বছর কারাদণ্ডের নিয়ম করা হয়েছে। ৬৫ ধারায় ১৬ বছরের কম বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণের শাস্তি ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হিসেবে স্থির করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হলে অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
রাজ্য সরকারগুলি আর একতরফাভাবে রাজনৈতিক মামলা বন্ধ করতে পারবে না। অভিযোগকারী যদি বিক্ষোভ, বিশৃঙ্খলায় সাধারণ নাগরিক হন, তাহলে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। সাক্ষীদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও নিয়মে নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কাগজের রেকর্ড রাখার পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমেও রেকর্ড রাখতে হবে।
গণপিটুনি নিয়ে কড়া কেন্দ্র
গণপিটুনির মতো ঘটনাকেও অপরাধের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৩ ধারায় মামলা রুজু করা হতে পারে। ১১১ ধারায় সংগঠিত অপরাধের শাস্তির বিধান রয়েছে। ১১৩ ধারায় সন্ত্রাস আইনের কথা বলা হয়েছে। গণপিটুনির ক্ষেত্রে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান পর্যন্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।