প্রীতি পোদ্দার, মুম্বই: ফের ভুয়ো নথির কারবার! জাল তথ্য ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে বসবাস করছেন এক রূপান্তরকামী! ধর্ম এবং ভক্তিকে কাজে লাগিয়ে রীতিমত ব্যবসা করে বসেছেন মুম্বইতে (Mumbai)। নেপথ্যে জোর কদমে চালাচ্ছিলেন মানব পাচার এবং দেহ ব্যবসার কাজ। শেষে সংকেত বার্তার মাধ্যমে অবশেষে গ্রেফতার করল মুম্বই পুলিশ।
ফাঁস গুরু মার কীর্তি
প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত ৩০ বছর ধরে ভুয়ো নথি ব্যবহার করে পূর্ব মুম্বইয়ে একটি জনবহুল গলিতে একটি বাড়িতে তিনশোর বেশি ভক্তকে নিয়ে থাকেন বাংলাদেশের রূপান্তরকামী নাগরিক বাবু আয়ান খান ওরফে জ্যোতি। মুম্বইয়ে নিজেকে এক ‘আধ্যাত্মিক নেত্রী’ হিসেবে সকলের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। প্রায় ৩০০ জন অনুগামী রয়েছে তাঁর। সকলের প্রিয় এই ‘গুরু মা’ ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট আধার ও প্যান কার্ড ব্যবহার করে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে চোখে ধুলো দিয়ে আসছিলেন সকলকে। কিন্তু পুলিশের নজরে আসতেই আসল সত্যি বেরিয়ে আসে।
ফ্ল্যাট ও ঘর বেআইনিভাবে দখল গুরু মার
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গুর মার নেতৃত্বে মেয়ে পাচারচক্র চলত। মূলত মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের ভারতে ঢোকানো হত। প্রথমে তাঁদের কলকাতায় কয়েকদিন রাখা হত। সেখানেই তৈরি করা হত ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট ও স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট। এরপর তাঁদের মুম্বই নিয়ে গিয়ে শিবাজি নগর এলাকায় রাখা হয়। প্রতিটি ঘরে ৩-৪ জন করে থাকত, আর প্রতি মাসে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হত ‘গুরু মা’কে। এছাড়াও গুরু মা মহারাষ্ট্র হাউজিং অ্যান্ড এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র আওতায় থাকা ফ্ল্যাট ও ঘর বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছিলেন। সেগুলি ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতেন। দেহব্যবসাতেও নাম উঠেছে তার।
আরও পড়ুন: সহপাঠীই নির্যাতিতার প্রেমিক! হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটেই প্রকাশ্যে এল তথ্য, বার্তা পুলিশের
তদন্তের বেড়া জাল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে
তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই গুরু মার বিরুদ্ধে মানব পাচারের সংখ্যা বাড়ছে। অভিযোগ, বাবু আয়ান খান ওরফে জ্যোতি অন্তত নাকি ২০০ জন বাংলাদেশিকে ভারতে পাচার করেছেন। এখনও জারি রয়েছে তদন্ত। এদিকে ‘গুরু মা’ গ্রেফতারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিবাজীনগর থানার সামনে জড়ো হন কয়েকশো ভক্তরা। অবিলম্বে জ্যোতিকে মুক্তির দাবি জানাতে থাকে। কিন্তু ইতিমধ্যেই ধৃতের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণা অভিযোগেও মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা যুক্ত তা জানতে বিভিন্ন জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তকারীরা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দিকেও নজর রাখছেন।