প্রীতি পোদ্দার, দেরাদুন: ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটের ইস্তাহারে উত্তরখণ্ডে বিজেপি বলেছিল, ক্ষমতায় ফিরে এলে তারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বলবৎ করবে। অবশেষে সেটাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। যদিও বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি সমাজের বিশিষ্টজনেদের অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিগত আইন বা ‘পারসোনাল ল’ হল মৌলিক অধিকারের অংশ। এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট রায় রয়েছে। কিন্তু যেহেতু এই বিধিতে নারীর অধিকার নিয়ে কথা উঠেছে তাই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হওয়া নিয়ে অনেকেই মত দিয়েছেন। তাই সবশেষে আজ অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি থেকে উত্তরাখণ্ডে কার্যকর হচ্ছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড। তাতেই বদলে গিয়েছে একাধিক নিয়ম।
সমস্ত ধর্মে বিবাহের আইন নিয়ে রদবদল
সূত্রের খবর, উত্তরাখণ্ডের এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন অনুযায়ী এখন থেকে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের নিয়ম আরও সহজ করা হয়েছে। শুধু ছেলেরা নয় সম্পত্তিতে মেয়েরাও সমান অধিকার পাবে। ছেলে-মেয়ে দুজনকেই সন্তান হিসাবে উল্লেখ করা হবে। এমনকি লিভ ইন সম্পর্কে জন্মানো সন্তানকে বৈধ সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি সেই সন্তানও সম্পত্তিতে অধিকার পাবে। এমনকি বিয়ের রেজিস্ট্রেশনও বাধ্যতামূলক হতে চলেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। সেক্ষেত্রে সমস্ত ধর্মে বিবাহের জন্য নারী, পুরুষ উভয়ের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। এছাড়াও লিভ ইন সম্পর্ক এবং বহুগামিতা নিয়েও উঠে এসেছে নানা নিয়ম।
লিভ ইন সম্পর্ক নিয়ে কড়া মন্তব্য
জানা গিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী লিভ ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে ২১ বছরের কম বয়সীরা যদি লিভ-ইন সম্পর্কে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে। যদি কেউ এই লিভ ইন সম্পর্কের বিষয়ে প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য জমা দেন, তাহলে সেক্ষেত্রে শাস্তিস্বরূপ তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে বলে স্পষ্ট জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে।
পাশপাশি লিভ ইন সম্পর্কে থাকার সঙ্গে সঙ্গে জমা দিতে হবে তথ্য এক্ষেত্রে যদি কেউ এক মাস দেরি করে তাহলে তাঁর তিন মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় সাজাই হতে পারে। এছাড়াও উত্তরাখণ্ডে বহুগামিতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে বাল্য বিবাহ ও তিন তালাক, ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত একাধিক নিয়ম। শুধুমাত্র শিডিউল ট্রাইবের উপরে এই নিয়ম লাগু হবে না। পাশাপাশি অভিন্ন বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে নারী ও পুরুষ একাধিক বিয়ে এবং একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা দেশেই অভিন্ন ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। তাই সেই অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মতো উত্তরাখণ্ডকে মডেল করা হয়েছে। উত্তরাখণ্ডকে দেখে অসম, গোয়া, উত্তর প্রদেশও অভিন্ন বিধি চালু করার প্রস্তুতি শুরু করলেও চূড়ান্ত পদক্ষেপ করার আগে উত্তরাখণ্ডের অভিজ্ঞতা দেখে নিতে চাইছে রাজ্যগুলি। যদি এর সুপ্রভাব পড়ে তাহলে বাকি রাজ্যগুলিতে ধীরে ধীরে চালু হবে এই আইন।