সাম্প্রতিক সময়ে বহু জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে কখনও লাখ লাখ টাকা তো আবার কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। আচ্ছা আপনার মনেও কি কখনও প্রশ্ন জাগে যে এত টাকা যে তল্লাশির সময়ে উদ্ধার হয় সেগুলি নিয়ে ইডি পরে কী করে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আজ চোখ রাখুন এই প্রতিবেদনটির ওপর।
২০২১ সাল এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার করে ইডি। এরপর দুদিন আগেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে ৩৫ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঝাড়খণ্ডের মন্ত্রী আলমগীর আলমের ব্যক্তিগত সচিব সঞ্জীব লালের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। সোমবার সঞ্জীব লালের বাড়ির সহায়ক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে হানা দিয়ে ফ্ল্যাট থেকে ৩৫.২৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। এরপর দ্বিতীয় আস্তানা থেকে ২ কোটি ১৩ লাখের বেশি বাজেয়াপ্ত করে ইডি করা হয়েছে।
অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় মামলায় এখনও পর্যন্ত ৩৭ কোটি টাকারও বেশি নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় এই বাজেয়াপ্ত টাকা নিয়ে ইডি কী করে জানেন? জানলে হয়তো আপনিও আকাশ থেকে পরবেন। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুসারে, যদি কোনও সম্পত্তি বা নগদ অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে উপার্জন হয়েছে বলে উঠে আসে তদন্তে তাহলে সেটি ‘অপরাধমূলক আয়’ এবং এটি আর্থিক দুর্নীতি হিসাবে বিবেচিত হয়। “অপরাধমূল আয়” অর্থ আয় মানে হল কোনও ব্যক্তি অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে উপার্জন করে। এটাই ইডির এক্তিয়ারে পড়ে। একই সঙ্গে মামলাটি ‘হিসাব বহির্ভূত নগদ’-এর হলে তার তদন্ত করে আয়কর দফতর।
অর্থ পাচারের মামলায় ইডি যখন কোনও সম্পত্তি বা নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করে, তখন কর্তৃপক্ষকে সে সম্পর্কে তথ্য দিতে হয়। আইন অনুসারে, ইডির অর্থ বাজেয়াপ্ত করার অধিকার রয়েছে, তবে তারা এই উদ্ধার করা নগদ নিজের কাছে রাখতে পারে না।
প্রোটোকল অনুযায়ী, যখনই ইডি নগদ টাকা উদ্ধার করে, তখনই অভিযুক্তের কাছে তার উৎস চাওয়া হয়। যদি অভিযুক্ত টাকার সোর্স কথা থেকে আসছে তা ব্যাখ্যা করতে না পারে বা ইডি তার জবাবে সন্তুষ্ট না হয়, তবে এটি ‘হিসাব বহির্ভূত নগদ’ বা ‘অন্যায়ভাবে অর্জিত’ টাকা হিসাবে বিবেচিত হয়। তারপরে, নগদ পিএমএলএ এর অধীনে বাজেয়াপ্ত করা হয়। এরপরই এসবিআই টিমকে নোট গুনতে ডাকে ইডি। নোটগুলি মেশিন দ্বারা গণনা করা হয়। তারপরে ইডি টিম এসবিআই কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাজেয়াপ্ত মেমো প্রস্তুত করা হয়।
কত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে? কোন মুদ্রায় কয়টি নোট থাকে? সিজার মেমোতে এসবই উল্লেখ করা হয়। পরে সেটা সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা বাক্সবন্দি করা হয়। এরপর সেই উদ্ধার হওয়া টাকা এসবিআই শাখায় জমা হয়। এই সমস্ত টাকা ইডির পার্সোনাল ডিপোজিট (পিডি) অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এর পরে এই নগদ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা হয়। তবে বাজেয়াপ্ত করা টাকা ইডি বা ব্যাঙ্ক কেউই ব্যবহার করতে পারবে না। অভিযুক্ত যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে সব টাকাই কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে ঢুকে যায়। তবে অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেলে সব টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।