দেবপ্রসাদ মুখার্জী: ২০২২ সালে দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যার স্মৃতি ফের একবার টাটকা হয়ে উঠলো। সেই ঘটনায়, শ্রদ্ধার লিভ-ইন পার্টনার আফতাব আমিন পুনাওয়ালা তাঁকে খুন করে তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করে ফ্রিজে রেখেছিল। আর এবার ব্যাঙ্গালুরু শহরে ঘটল এমনই নির্মম একটি ঘটনা। ২৯ বছর বয়সী মহালক্ষ্মীর দেহও ঠিক একইভাবে টুকরো করে ফ্রিজে রাখা হয়েছিল। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে।
বেঙ্গালুরুর ব্যালিকাভাল এলাকায় এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, এই এলাকার ২৯ বছর বয়সী মহালক্ষ্মীকে নৃশংসভাবে খুন করে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে তাঁরই বাড়ির ফ্রিজে রাখা ছিল। পুলিশ ওই মহিলার দেহের ২৮ টি টুকরো উদ্ধার করেছে। এই নির্মম ঘটনা পুরো শহরকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মহালক্ষ্মীর প্রাক্তন স্বামী হেমন্ত দাস আশরাফ নামক এক নাপিতকে সন্দেহ করছেন, যাঁর সঙ্গে মহালক্ষ্মীর অবৈধ সম্পর্কের তত্ব তিনিই সামনে এনেছেন।
দুর্গন্ধ পেয়ে ফ্রিজ খুলে দেহের টুকরো দেখতে পান মহালক্ষ্মীর মা
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি, মহালক্ষ্মীর বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে অভিযোগ করেন। এরপর মহালক্ষ্মীর মা মীনা রানা ও বোন লক্ষ্মী বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। মৃত মহিলার মীনা জানান, “আমরা যখন দরজা খুলে ঘরে ঢুকলাম, ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। চারদিকে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। রান্নাঘরের কাছাকাছি পোকামাকড় চলাফেরা করছিল। আমরা ফ্রিজ খুলতেই ভিতরে দেহের টুকরোগুলি দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে ছুটে এসে আমার জামাই ইমরানকে ডাকি। সেই তড়িঘড়ি পুলিশকে খবর দেন।” মহালক্ষ্মীর মায়ের মতে, শেষবার তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর। মহালক্ষ্মী তখন জানিয়েছিলেন, তিনি শীঘ্রই তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অবৈধ সম্পর্ক থেকে ব্ল্যাকমেলিং, তার জেরেই খুন!
এদিকে মৃত মহিলার প্রাক্তন স্বামী হেমন্ত দাস অভিযোগ করেন যে আশরাফ নামের এক নাপিত এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। হেমন্ত জানান যে মহালক্ষ্মীর অবৈধ প্রেমিক আশরাফ উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হলেও স্থানীয় নেলমঙ্গল এলাকায় একটি সেলুনে কাজ করতেন, তিনি আরও জানান, মহালক্ষ্মীর সঙ্গে আশরাফের অবৈধ সম্পর্ক থাকার কারণে প্রায়ই নাকি সে মহালক্ষ্মীকে ব্ল্যাকমেইল করতো। সেই কারণেই নাকি মহালক্ষ্মী নেলমঙ্গল পুলিশ স্টেশনে আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কয়েকমাস আগে। হেমন্ত আরও জানান, “২০২৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে আমি মহালক্ষ্মী ও আশরাফের সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর আমি মহালক্ষ্মীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি। গত ৯-১০ মাস ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না।”
হত্যাকারীকে ধরতে মরিয়া পুলিশ
ঘটনার তদন্ত করে খুনিকে ধরার জন্য ইতিমধ্যে পুলিশ ১৫০ টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করেছে। যদিও এখনো মহালক্ষ্মীর মোবাইল ফোন ও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জানা গেছে, পুলিশের পাঁচটি দল এই মামলার তদন্ত করছে। বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শিখর এইচ. টেক্কানওয়ার জানান, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করছি। কোনও নির্দিষ্ট সূত্র পাওয়া গেলে তা প্রকাশ করব। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, যাতে হত্যার সঠিক সময় ও কারণ জানা যায়।”