প্রীতি পোদ্দার, ঢাকা: গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশ জুড়ে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, দেশের নানা প্রান্তে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতেও। ইউনূস-পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ। আর তাতেই এবার নিজেদের সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে পথে নেমেছে হিন্দুরা।
আর এই আবহে কিছু ধর্মীয় সংগঠন মিলে তৈরি করে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র নির্বাচিত হয়েছিলেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তাঁরই ডাকে বাংলাদেশের শহিদ মিনার, চট্টগ্রাম ইত্যাদি নানা এলাকায় সমাবেশে অংশ নেন হাজার হাজার সংখ্যালঘু। চট্টগ্রামে সমাবেশের পর তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেছিলেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। আর ওই মামলাতেই গত সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তাঁর জামিনও খারিজ হয়ে গিয়েছে। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর থেকে বাংলাদেশের একাংশ উত্তাল। চট্টগ্রাম, রংপুরের মতো জায়গায় সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষও হয়েছে। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। আর এদিকে ইসকন এর এক বিবৃতি গোটা ঘটনার অন্য রূপ প্রদান করে।
ISKCON-র সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই চিন্ময়কৃষ্ণর!
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘মাস কয়েক আগেই শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করেছে ইসকন বাংলাদেশ। তাই তাঁর কোনও রকম বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপের দায় ইসকনের নয়।’’ এছাড়াও তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই একাধিক প্রেস কনফারেন্স এবং সরকারি ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা পরিষ্কার করেছি। দুঃখের বিষয়, কিছু গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সংস্থা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এবং ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য অযৌক্তিক দাবি করছে।” ইসকনের এই বিবৃতি সমাজমাধ্যনে ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায়। আর এই আবহেই আরও এক বিবৃতি প্রকাশ করে ইসকন।
ইসকনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘চিন্ময়কৃষ্ণের অধিকার, বাংলাদেশে হিন্দুদের এবং তাদের ধর্মীয় স্থানগুলি রক্ষার জন্য তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ইসকন। তাঁর থেকে দূরত্ব তৈরি করা হয়নি। আমরা শুধু একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, তিনি ইসকনের সদস্য নন। বাংলাদেশের ইসকনের প্রতিনিধিত্ব তিনি করছেন না। গত কয়েক মাসে এই কথা একাধিক বার আমরা বলেছি।’’ অর্থাৎ এই বিবৃতির মাধ্যমে তারা এই ধর্মীয় নেতার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। চিন্ময়ের গ্রেফতারি এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বাদ যায়নি ব্রিটিশ সরকার।
ক্ষুব্ধতা প্রকাশ ব্রিটিশ সরকারের
চিন্ময়কৃষ্ণের প্রসঙ্গ সংসদে তুলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের অভিযোগের দিকে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিরোধীরা। ব্ল্যাকম্যান ব্রিটেনের ইসকন মন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির পরিচালনা করে ইসকন। তাদের ধর্মীয় নেতা বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন।’’ বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথাও সংসদে জানিয়েছেন তিনি। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা।