সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পহেলগাঁও হামলার জেরে কাশ্মীরের মাটিতে এখন রক্ত ঝরছে। 26 জন নিরীহ পর্যটকের প্রাণ সন্ত্রাসবাদীরা এক মুহূর্তেই শেষ করে দিয়েছে। পাকিস্তান মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় নিচ্ছে। গোটা ভারত এখন শোকে স্তব্ধ। আর এই ঘটনার পরই ভারত-পাকিস্তান (India Pakistan) সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এবারে বিশ্বমঞ্চে চিত্রটা একটু ভিন্ন। মুসলিম দেশগুলি যেভাবে অতীতে ধর্মীয় সংঘাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতো, এবার তাদের মধ্যে অনেকেই নীরবতা পালন করছে অথবা সরাসরি ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ছে।
ভরসা অর্থনীতির উপর, ধর্মের উপর নয়
সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সহ বেশ কিছু দেশ ভারতের সঙ্গে শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে। ভারত এই সমস্ত দেশের সবথেকে বড় খনিজ তেল ক্রেতা, আবার অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় প্রবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স এই দেশগুলির অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করছে।
বেশ কিছু বিশ্লেষক বলছে, সৌদি আরব এখন তার ‘ভিশন 2030’ প্রকল্পে মনোযোগ দিয়েছে। আর সেই মিশনে ভারতকে তারা প্রধান বাণিজ্যিক সহকারী হিসেবেই দেখছে। আর সে কারণেই তারা কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়নি।
কাতার এবং আরব আমিরাতের কী অবস্থা?
কাতার, যারা বৈদেশিক নিরপেক্ষতার উপর সবসময় জোর দেয়। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে তারাও একই সৌদি আরবের মতো মনোভাব দেখিয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তাদের কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। ধর্মীয় সংহতির জায়গা পরে। কূটনৈতিক ভারসাম্য আগে বজায় রাখতে হবে।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যাদের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য প্রায় 85 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে, তারা শুধুমাত্র সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তবে পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি মুখ খোলেনি।
ইরান কী বলছে?
অন্যদিকে ইরান একটু আলাদা রাস্তায় হাঁটছে। তারা সরাসরি কোনও পক্ষও নিচ্ছে না, আবার দ্বন্দ্ব কমাতেও কোনও প্রভাব ফেলছে না। তারা এখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছে। চাবাহার বন্দর প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে যৌথ কাজ এখন ইরানের মূল টার্গেট। তাই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরানোর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা।
আরও পড়ুনঃ মাত্র ৪ দিনেরই গোলা, বারুদ মজুত আছে পাকিস্তানে! ভারতের সাথে যুদ্ধের আগে খুলল মুখোশ
তুরস্কের অবস্থান কোথায়?
এদিকে তুরস্ক খাতায়-কলমে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও, এবার পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। 2024-এ ভারতের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্য প্রায় 10 মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। আর সেই সম্পর্ক ধরে রাখতে এখনো পর্যন্ত শুধু কূটনৈতিক দিক দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকছে তারা। তবে বেশ কিছু সূত্র বলছে, তুরস্ক নাকি কি পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। যদিও তুরস্ক সে কথা অস্বীকার করছে। তারা পাকিস্তানকে কোনওরকম সামরিক সহায়তা পাঠায়নি বলেই দাবি তুলেছে।