প্রীতি পোদ্দার, ঢাকা: একের পর এক চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে (Bangladesh Government)। প্রথম দিকে কোটা বাতিলের দাবিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত গদি ছাড়তে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠন করা হল অন্তর্বর্তী সরকার। যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু তাতেও বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়নি। বরং হিন্দুদের ওপর অত্যাচার আরও ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। চারিদিকে মন্দির হামলা, হিন্দুদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ফেলার মত ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর এই আবহেই ইসকনদের উপর সেখানকার মুসলিমদের ক্ষোভও যেন বেড়ে গেল।
বাংলাদেশে চরম সংকটে হিন্দুরা!
কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা সেদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। এমনকি এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যায়িত করে চরম হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল। না হলে ISKCON ভক্তদের ধরে ধরে হত্যা করার হুমকিও দেন তারা। কট্টরপন্থী মুসলিমদের সামাজিক মাধ্যমে হুমকির পরই আতঙ্কিত হয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানান তাঁরা। এদিকে গত শুক্রবার রংপুরে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলতেই পুনরায় আন্দোলনে নামে হিন্দুরা। সেখানে বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় প্রভু দাস। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, সম্প্রীতি রক্ষায় সেদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মুসলিমদের অবদানের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
কিন্তু প্রকাশ্য সভায় বক্তব্য রাখার পর সেদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের টার্গেট হয়ে যান চিন্ময় প্রভু। এরপর গত সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এই সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আপাতত জেলবন্দী রয়েছেন তিনি। আর এই আবহে চট্টগ্রামের অবস্থা খুবই শোচনীয়। পুলিশ-সেনা-আধা সেনার যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হলেও ওই বন্দর শহরের সংখ্যালঘুরা চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বেশি রাত পর্যন্ত শহরের হিন্দু মহল্লায় হামলা, লুঠতরাজ চলে বাংলাদেশের সোনা এবং ওষুধের বৃহত্তম মার্কেট হাজারি গলিতে। শুধু তাই নয় রীতিমত সেখানকার মন্দিরও ভাঙচুরও করা হয়। এমনকি সেখানকার পুলিশের সামনেই এমন ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামে মন্দির হামলা ও লুঠ
জানা গিয়েছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কথা জানালেও হামলার ঘটনার সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। চট্টগ্রাম শহরের হিন্দু প্রধান এলাকা দেওয়াঞ্জী পুকুর পাড়, হেম সেন লেন, চটেশ্বরী কালীবাড়ি, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গিবাজার, জামালখান রোড, আসকারদিঘি, দেওয়ানবাজার, নন্দন কানন, সদরঘাট, নালাপাড়ার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন সংখ্যা গরিষ্ঠদের হামলার কারণে। তার উপর চট্টগ্রামে হিন্দুদের প্রতিবাদ মিছিলে হামলার ঘটনায় সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
পথে নামবে সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলিও!
প্রশাসন সূত্রের খবর, সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে বছর পঁচিশের ওই তরুণ শিক্ষানবীশ আইনজীবী গোলমালের মাঝে পড়ে গিয়ে নিহত হন। তবে তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। এদিকে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধরে নিয়েছেন আইনজীবীদের একাধিক সংগঠন। তাই তার প্রতিবাদে আজ চট্টগ্রামের আদালত বর্জনের ডাক দিয়েছে আইনজীবীদের একাধিক সংগঠন। অন্যদিকে, ইসকনের সাধু চিন্ময়কৃষ্ণকে মুক্তির দাবিতে সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলিও আজ পথে নামার কর্মসূচি নিয়েছে।