কলকাতাঃ একটা সময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কাঁটাতার ছিল না। তবে ব্রিটিশ-রাজ শেষ হওয়ার পরই দুই দেশ আলাদা হয়ে যায়। তবে তারপরেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বেশ মজবুত। বিশেষ করে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনও বেশ নিবিড়। ১৯৭১ সালের পর থেকেই এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও নিবিড়। কারণ ভারতের এইসব রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রধানত খাদ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, পেট্রোলিয়াম পণ্য, কাঁচামাল, ওষুধ এবং বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভারত প্রধানত তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়া, সিরামিক, এবং কৃষিজ পণ্য আমদানি করে। তবে এক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক যে ভারত থেকে কি কি সামগ্রী আমদানি করে বাংলাদেশ।
খাদ্যশস্য, শুকনো খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
ভারত থেকে বছরের প্রায় সব সময়ই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি, চাল, ডাল, মশলা এবং ফলমূল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, ও অন্যান্য মৌসুমি সবজির জন্য বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, বিভিন্ন ধরণের শুকনো খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রীও ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।
পেট্রোলিয়াম ও জ্বালানি সামগ্রী
বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় জ্বালানির একটি বড় অংশ ভারত থেকে যাওয়া পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। ভারত থেকে ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এই জ্বালানি সামগ্রীগুলো দেশের পরিবহন, কৃষি এবং শিল্পখাতে ব্যবহৃত হয়।
ওষুধপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম
বাংলাদেশ ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের একটা বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি করে। জীবনদায়ী ওষুধ, বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি যেমন এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসাউন্ড মেশিন ইত্যাদি ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।
বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী
বাংলাদেশে ব্যবহার করা বৈদ্যুতিক পণ্য ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারত থেকে যায়। এর মধ্যে টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উল্লেখযোগ্য। এসব সামগ্রী বাংলাদেশে উৎপাদনের তুলনায় কম খরচে ভারত থেকে আমদানি করা সম্ভব।
পোশাক ও বস্ত্র তৈরির কাঁচামাল
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত অনেক কাঁচামাল, যেমন সুতো ও ফ্যাব্রিক, ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এই কাঁচামালগুলি বাংলাদেশে পোশাক উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য এবং দেশের রপ্তানি খাতের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে।
বিদ্যুৎ
ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ কিনে থাকে বাংলাদেশ। প্রতি বছরই মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনে প্রতিবেশী দেশটি। এক্ষেত্রে মূলত আদানি পাওয়ার-এর থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।