বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: চিনের সবচেয়ে বড় শত্রু কে? প্রশ্নটা গুগলের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিলে উত্তরে হিসেবে একাধিক ফলাফল সামনে আসে। কিছু ওয়েবসাইট বলে, কূটনৈতিক দিক থেকে চিনের সাথে রেষারেষি রয়েছে আমেরিকার। কোথাও ভারতকে চিনের অন্যতম বড় শত্রু হিসেবে দেখায়। কিন্তু আদতে চিনের বড় শত্রু বিরাট মরুভূমি। দীর্ঘ সময় ধরে বালুকাময় মরু দেশের সাথে লড়াই করে চলেছে ড্রাগন। চিনের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশজুড়ে শুধুই মরুভূমি। বলা বাহুল্য, দেশটির জলবায়ুর উপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে মরুভূমির। যা মূলত মার্চ এবং এপ্রিল মাসে প্রকট হয়ে ওঠে। যদিও মরুকরণের হাত থেকে রেহাই পেতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীর (China Great Green Wall) তৈরি করেছে জিনপিংয়ের দেশে।
গাছ বসিয়ে সবুজ প্রাচীর দিয়ে মরুভূমি আটকানোর চেষ্টায় চিন
নিউজ সিজিটিএন ডট কমের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত 13 বছরে 12 লক্ষ 95 হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি অংশ জুড়ে থাকা বিরাট মরুভূমিকে জঙ্গলে পরিণত করেছে চিনারা। মরুভূমির এক বিরাট অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে সবুজ প্রাচীর। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্থানীয়দের সহায়তায় 30,000 হেক্টরেরও বেশি জায়গায় গাছ লাগানো সম্ভব হয়েছে। যার কারণে, বালুকাময় অঞ্চলগুলি কৃষি জমি ও বাগানে রূপান্তরিত করা গিয়েছে। 2009 এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মরুভূমির যতটুকু অংশ জঙ্গলে পরিণত করা গিয়েছে সেই হিসেব অনুযায়ী, চিনের ওই মরুভূমি অংশই বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানুষ নির্মিত অরণ্য।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সময় যত এগোচ্ছে ততই গোবি মরুভূমি তার আকার বা পরিধি বিস্তার করছে। ইতিমধ্যেই মরুকরণের কারণে চিনের 3600 বর্গ কিমি জমি দখল করে নিয়েছে এই মরুভূমি। মরু ঝড়ে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে মাটির উপরের অংশ। শুধু চিনই নয়, মরু ঝড়ের কারণে প্রতিবেশী দেশ জাপান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে 1978 সালে সবুজ দেওয়াল বা গ্রিন ওয়াল নামক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে চিন সরকার। গোবি মরুভূমির বুকে যা সবুজ বিপ্লব ঘটায়। আর সেই সূত্র ধরেই, মরুভূমির বুকে গাছ বসিয়ে সবুজ প্রাচীর তুলে মরু ঝড় থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে ড্রাগনের দেশ।
শোনা যাচ্ছে, চিন অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার 3টি মরুভূমির সংযোগকারী বালু নিয়ন্ত্রণ বেল্ট তৈরি করেছে। এটি উত্তর অঞ্চলে একটি সবুজ গ্রেট ওয়াল তৈরির দিকে আরও এক বড় পদক্ষেপ বলা যায়। সিনহুয়া বলছে, নানা ভাবে সবুজ প্রাচীর তৈরি করে এখনও পর্যন্ত 15 শতাংশ বা তার বেশি মরুভূমি অঞ্চলকে অরণ্যে পরিণত করেছে চিন। সর্বগ্রাসী মরুভূমিকে রুখতে পেরেছে অনেকটাই।
চিনের সবুজ প্রাচীরের দৈর্ঘ্য
চিনের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মরুভূমির আগ্রাসন আটকাতে চিনা সরকার যে সবুজ প্রাচীর বা গ্রিন ওয়াল তৈরি করেছে তার দৈর্ঘ্য কমপক্ষে 1,856 কিলোমিটার। জমি যাতে বালুকাময় না হয়ে ওঠে সে জন্য বিরাট আকারের গাছপালা রোপণ করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, আলস্কা লিগ, অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার পশ্চিমতম অংশ মিলিয়ে মোট 3টি মরুভূমি 94,700 বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে। না বললেই নয়, বাদান জারান চিনের তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি।
অবশ্যই পড়ুন: হার মানল অভিষেকের ক্লাব! গত কলকাতা লিগের চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল, ঘোষণা IFA-র
প্রসঙ্গত, মরুভূমির অতি শুষ্ক পরিবেশে গাছপালা বাঁচিয়ে রাখার বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল চিনের জন্য। তবে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে ড্রাগন। জানা যায়, হেলিকপ্টার বা ড্রোনে করে উপর থেকে বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে। এছাড়াও স্থানীয় কৃষকদের গাছ লাগানোর উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার্য করেছে চিন সরকার। গাছ রোপন করে প্রতি গাছ পিছু টাকা পান তারা। এভাবে 2009 সাল পর্যন্ত মরুভূমির 5 লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গাছ বসিয়ে দিয়েছিল চিন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে মরুভূমিকে অরণ্যে পরিণত করলেও চিনের কৌশলে গলদ রয়েছে। আসলে চিন যে ধরনের গাছপালা রোপণ করছে সেগুলি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আর এখানেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। এই গাছগুলোর শিকড় মাটির অনেক গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে মাটির নিচ থেকে ভূগর্ভস্থ জল শোষণ করে নেয় তারা। এর প্রভাব পড়ে চাষাবাদ এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। ফলে জলের সংকট বিরাট আকার ধারণ করে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিন যেসব গাছপালা বসাচ্ছে সেগুলির ডালপালা নেই। ফলে পশু পাখির জন্য ওই অঞ্চল বসবাসের পক্ষে কার্যত অযোগ্য। সেক্ষেত্রে জঙ্গলের নিজস্ব বাস্তুতন্ত্রের অভাব দেখা দেয়। যার কারণে ওই জঙ্গল টিকিয়ে রাখার সম্ভাবনা কম এবং বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।