প্রীতি পোদ্দার, সুন্দরবন: এর আগে পশ্চিম সুন্দরবনে (Sundarbans) ডাকাত দলের একের পর এক কর্মকাণ্ড নাজেহাল করে দিয়েছিল কোস্টগার্ডের কমান্ডারদের। অবশেষে ২০১৮ সালে সুন্দরবনকে ডাকাত মুক্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সেই পুরোনো দিনের আতঙ্ক যেন আবার ফিরে এল। সম্প্রতি, বাংলাদেশের অন্তর্গত পশ্চিম সুন্দরবনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ডাকাতদল। অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি এবং ডাকাতির ঘটনার বেড়ে যাওয়ায় আবার এই অঞ্চলটি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
ঘটনাটি কী?
অভিযোগ উঠে এসেছে, ডাকাত দলের লোকেরা মূলত বন কর্মকর্তাদের ছদ্মবেশে মাছ ধরার নৌকা আটক করে টাকা আদায় করে চলেছে অথবা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিচ্ছে। এমনকি অনেক মৎসজীবীকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে। অনেকে আবার কোনো রকমে সেই জায়গা থেকে পালিয়ে বেঁচে ফিরেছে এবং পুলিশকে সমস্তটা জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে গত চার মাসে ৬টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম সুন্দরবনে।
৪ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল
সূত্রের খবর, ৮ নভেম্বর কয়রা উপজেলার দুই মৎসজীবী আতাহার হোসেন ও রফিকুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছিল। জানা যায়, ডাকাত দল নিজেদের দয়াল বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অপহরণ করেছিল। এরপরে তাদের পরিবারের কাছে ৪ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। সেই টাকা পাওয়ার পর তাদের মুক্ত করে দুষ্কৃতীদল। বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৩২টি দলের ৩২৮ জন দুষ্কৃতী আত্মসমর্পণ করেছে। তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২২,০২৪ রাউন্ড গোলাবারুদ হস্তান্তর করেছে।
এই সমস্যা গত কয়েক বছর ধরে ঘটেই চলেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ নিয়মিত নজরদারির অভাবের কারণে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছে। রীতিমত এলাকা কবল করে নিয়েছেন এই সকল ডাকাতের দল। মৎসজীবী এবং মধু সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে লুটপাট চালাচ্ছে এবং মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করছে। যার ফলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের উপরে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা মৎসজীবী এবং মধু সংগ্রহকারীদের জন্য ভয়ংকর জায়গা হয়ে উঠেছে এই এলাকাটি।
মৎসজীবী ও অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর আইন প্রয়োগ
এছাড়া স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, আসাবুর বাহিনী, শরীফ বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী এবং দয়াল বাহিনী – বিশেষ করে পশ্চিম সুন্দরবন, খুলনার কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এই ডাকাত দল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময় জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া কিছু বন্দিও এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছে। সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক আনোয়ারুল কাদির দুষ্কৃতীদের ধরতে এবং মৎসজীবী ও অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ ও নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এবিষয়ে কোস্টগার্ডের কমান্ডার (পশ্চিমাঞ্চল) ক্যাপ্টেন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ জানান, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত টহলদারি চলছে এবং গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সুন্দরবনে ডাকাত দল সক্রিয় হওয়া প্রসঙ্গে সহকারী বন সংরক্ষক এজেডএম হাসানুর রহমান জানান, তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১০ জন মৎসজীবী, তিনটি নৌকা, একটি সোলার প্যানেল এবং একটি বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |