বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: আচমকা বাংলাদেশকে (Bangladesh) দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। যার জেরে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওপার বাংলার বাণিজ্য যে বিপদের মুখে পড়বে এ কথা বুঝেছিলেন বহু সুবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। তবে, ভারতের কড়া পদক্ষেপের পর প্রথমদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, ভারতের এই বিশেষ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না।
আর সেই বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই বিরাট ক্ষতির মুখে ইউনূসের সরকার! ওপার বাংলার বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে যা খবর, প্রতিবেশী ভারতের তরফে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি খরচ যেমন মাত্রা ছাড়িয়েছে তেমনই মাথায় হাত পড়েছে রপ্তানিকারকদেরও। সেই সাথেই, দিল্লি বেঁকে বসায় খরচ বেড়েছে ঢাকা থেকে যাওয়া এয়ার কার্গোর।
বিরাট ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বেশ কিছু জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায়, প্রতিবেশীর ভূখণ্ড ব্যবহার করে কলকাতা বা দিল্লির মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের যে সুবিধা ছিল তা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার জেরে হুমকির মুখে পড়েছেন ওপার বাংলার ব্যবসায়ীরা। জানা যাচ্ছে, দিল্লি বিশেষ সুবিধা বাতিল করায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে কম খরচে গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক বিকল্পও। সব মিলিয়ে, ভারতের সিদ্ধান্তকে প্রথম দিকে উড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশ, এখন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একেবারে হামাগুড়ি দিচ্ছে!
বেড়েছে ঢাকা থেকে বিদেশগামী এয়ার কার্গোর খরচ
ওপার বাংলার সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, ঢাকা থেকে ইউরোপগামী এয়ার কার্গোর স্পট রেট প্রতি কেজি 6.30 ডলার থেকে বেড়ে 6.50 ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এই খরচ বৃদ্ধির রেকর্ড অন্যান্য সমস্ত রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশকে প্রতি কেজিতে 7.50 ডলারের পরিবর্তে 8 ডলার এয়ার কার্গোর খরচ গুনতে হচ্ছে। সূত্রের খবর, গত বছর এই খরচ ছিল 6.91 ডলার। এছাড়াও, কলকাতা থেকে প্রতি কেজিতে এয়ার কার্গোর খরচ 4 ডলার পড়ছে।
আরও একাধিক খরচ বেড়েছে
জানা যাচ্ছে, ভারতের বড় সুবিধা হাতছাড়া হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হচ্ছে। সূত্রের খবর, রপ্তানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জের পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ফি হিসেবে প্রতি কেজি 2.50 টাকা, স্ক্যানিয়ের জন্য প্রতি কেজিতে 2 টাকা ও ওয়্যার হাউস স্টোরেজের ভাড়াবাবদ প্রতিদিন কেজিতে 25 পয়সা করে গুনতে হচ্ছে, রপ্তানিকারকদের। বাংলাদেশের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে দিনের পর দিন খরচ বাড়তে থাকলে আগামী দিনে ব্যবসা পরিচালনার খরচ মাত্রা ছাড়াবে।
অবশ্যই পড়ুন: ব্যবসার রাস্তা বন্ধের পর এবার বাংলাদেশে রেল প্রকল্প স্থগিত করল ভারত, নজরে বিকল্প পথ
দ্বিগুন ভাড়া নেবে এয়ারলাইন সংস্থাগুলি!
সূত্র বলছে, ভারতের কড়া পদক্ষেপের পর একাধিক বিপদের মাঝে ফের এয়ারলাইন থেকে নতুন নোটিস পেয়েছে বাংলাদেশ। জানা যাচ্ছে, এয়ার কার্গো বিমান সংস্থার তরফে নোটিশে জানানো হয়েছে আগামী সপ্তাহ থেকে বিমানের ভাড়া আরও বাড়তে পারে। মূলত, স্পেস কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত চাহিদার কারণেই বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত সমস্ত পণ্যের ক্ষেত্রে ভাড়া একেবারে দ্বিগুণ করতে পারে, এয়ারলাইন সংস্থাগুলি। সব মিলিয়ে, ভারতের সাথে সখ্যতা নষ্ট হওয়ায় একেবারে লেজে গোবরে অবস্থা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে শুরু করে পদ্মা পাড়ের রপ্তানিকারকদের।