সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এবার বিরাট পদক্ষেপ নিল ভারত। হ্যাঁ, শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের নিউইয়র্ক ডিক্লারেশনকে (New York Declaration) সমর্থন করে ভোট দিয়েছে ভারত। আর এই প্রস্তাবের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ সুগম করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এমনকি 142 টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে আর 10 টি দেশ বিরোধিতা করেছে, পাশাপাশি 12 টি দেশ নিরপেক্ষ ছিল। উল্লেখ্য, ভারতের পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলিও প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল, আমেরিকা এবং আরও কয়েকটি দেশ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
কী এই নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন?
জানিয়ে রাখি, জুলাই মাসে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক উচ্চস্তরের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই ঘোষণা গৃহীত হয়েছিল। ফ্রান্স এবং সৌদি আরব এই বৈঠকের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিল। সাত পাতার ওই ঘোষণায় বলা হয়, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, ন্যায় সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির জন্য দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের জনগণের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।
কারা সমর্থন করেছে এবং কারা বিরোধিতা করেছে?
প্রসঙ্গত, ফ্রান্স এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং সৌদি আরব সহ প্রায় সমস্ত আরব দেশই সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল, আমেরিকা, আর্জেন্টিনা, পাপুয়া নিউগিনি, পালাও, টোঙ্গা সহ মোট 10 টি দেশ এর বিরোধিতা করেছিল। আর ইসরায়েল সরাসরি এই প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করে জানিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক রাজনৈতিক সার্কাস ছাড়া কোনও কিছুই নয়। ইসরায়েলের বিদেশী মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, ঘোষণায় হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
অন্যদিকে আমেরিকাও একই জায়গায় অনড় রয়েছে। মার্কিন কূটনীতিবিদরা এই প্রস্তাবকে হামাসের জন্য উপহার বলেই আখ্যা দিয়েছেন। তারা দাবি করছে, প্রস্তাবটি বাস্তব পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন এবং রাজনৈতিকভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট।
তাহলে ভারত কেন সমর্থন করল?
ভারতের অবস্থান সবসময় দুই রাষ্ট্রের সমাধানের পক্ষে। দীর্ঘদিন ধরে ভারত ফিলিস্তিনের শান্তির পক্ষে কণ্ঠস্বর তুলে এসেছে। তবে এবারের ঘটনাটি আলাদা। উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের তরফে গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা সমেত অনেক প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি।কিন্তু এবার ভারত ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে আলোচনা করে ইজরাইলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। আর এক সপ্তাহের মাথায় ভারত নিউইয়র্ক ডিক্লারেশনকে সমর্থন করে ভোট দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ফের আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যু! প্রেমিকের বিরুদ্ধেই আঙুল তুললেন মৃতার মা
তবে এই প্রস্তাব সরাসরি প্যালেস্টাইনের জন্য যে কূটনৈতিক জয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এতে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের ক্ষেত্রে এটি বিরাট ধাক্কা। কারণ প্রস্তাবটি তাদের সাম্প্রতিক পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনার পক্ষপাতিত্ব করেনি।