শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ বিদ্যুতের পর এবার নতুন করে সংকটে বাংলাদেশ (Bangladesh)। এমনিতে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া থাকার জন্য আদানি পাওয়ারের তরফে বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এবার আর্থিক, আইনি ও কারিগরি সমস্যার কারণে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে ওপার বাংলায়। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
এমনিতে বিশ্লেষকদের মতে, বকেয়া পরিশোধের কারণে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ড প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত কেবল দেশে বিদ্যুৎ বিঘ্নই ঘটাবে না, এর শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ চাহিদা বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম। এর কারণ হল, আদানি পাওয়ারের সিদ্ধান্তের কারণে ঘাটতি সামাল দিতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
ফের বিপদের মুখে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে আদানির বিদ্যুতের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এছাড়াও আদানি পাওয়ারের সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং-এর মাত্রাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশের সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তিন হাজার ১৯৯ মেগাওয়াটের মতো, যদিও এদের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা সাত হাজার ৯৯ মেগাওয়াট।
কী বলছে সরকার?
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট) মো. আদনান ইব্রাহিম সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, ‘কয়লা আমদানি করার প্রক্রিয়া চলছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কয়লা এলে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।’ এদিকে সরকারি কর্মীরা জানাচ্ছেন, শীঘ্রই হয়তো সমস্যার সমাধান হবে।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির তরফে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ অক্টোবর থেকে কয়লার অভাবে পুরোপুরি বন্ধ আছে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে অবস্থিত এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর আগের কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক সক্ষমতায় উৎপাদনে ছিল। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিসেম্বরের আগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেশীয় কয়লা ব্যবহার হলেও তিনটি ইউনিটের মধ্যে দুটি উৎপাদনে আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মোট উৎপাদন সক্ষমতা ৪৪৪ মেগাওয়াট হলেও দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পাচ্ছে ২৩৫ মেগাওয়াটের মতো। সবচেয়ে বড় ২৭৫ মেগাওয়াটের ইউনিটটি উৎপাদন করতে পারছে ১৭০ মেগাওয়াট করে। যদিও কতদিন অবধি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা নিয়েও ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অন্ধকারে তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ!
বিদ্যুৎ সহ আরও অনেক বিষয়ে একপ্রকার গলা অবধি ঋণে ডুবে গিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের কাছে ঋণের পাহাড় জমে গিয়েছে বাংলাদেশের। আর সেই টাকা সময় মতো শোধ না করায় বেঁকে বসেছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী আদানি গোষ্ঠী। প্রয়োজনের তুলনায় এখন অনেক কম বিদ্যুৎ নাকি বাংলাদেশকে সরবরাহ করছেন আদানি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। তবে এসবের মাঝেই এবার বাংলাদেশকে ডেডলাইন বেঁধেও দেওয়া হয়েছে আদানি পাওয়ারের তরফে। বাংলাদেশের কাছে এখন ঋণ পরিশোধ করার জন্য আর মাত্র ৪ দিন সময় রয়েছে। অর্থাৎ আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ যদি টাকা পরিশোধ না করে তাহলে এর ফল ভুগতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এখন বাংলাদেশের কাছে আদানি পাওয়ারের পাওনা ৮৫ কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা কিনা প্রায় ৭২০০ কোটি টাকা। এখন দেখার বাংলাদেশ কবে ভারতের টাকা পরিশোধ করে।