প্রীতি পোদ্দার, ইসলামাবাদ: বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান (Pakistan) অভিযোগ করে এসেছে যে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (Research and Analysis Wing) তাদের মাটিতে নাকি একাধিক ব্যক্তিকে খুন করেছে। আর এই সব খুন হওয়া ব্যক্তিরাই নাকি আদতে ভারত বিরোধী জঙ্গি নেতা। এছাড়াও ইসলামাবাদের তরফ থেকে অভিযোগ উঠছে যে খুনের জন্য নাকি RAW আফগানদের ভাড়া করছে এবং দুবাইয়ে বসে হত্যার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছে। এই ধরণের একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে পাকিস্তানের তরফ থেকে। এমনকি পাক বিদেশ মন্ত্রক মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালুচ এর তরফ থেকে ভেসে আসছে একই সুর।
পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি হত্যা চালাছে RAW
জানা গিয়েছে সম্প্রতি পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালুচ জঙ্গি হত্যার ব্যাপারে নাম না করে আফগানিস্তানের তালিবান শাসক এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’-র দিকে আঙুল তুলেছেন। এই দুই সংগঠনের থেকে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার এজেন্টরা যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিকে ইসলামাবাদের এই দাবির নেপথ্যে উঠে এসেছে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন। যা সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ এর ৩১ ডিসেম্বর আমেরিকার একটি জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ‘ইন ইন্ডিয়াজ শ্যাডো ওয়ার উইথ পাকিস্তান’ এর একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল পাক ভূমিতে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পিছনে RAW এর ভূমিকার কথা।
এছাড়াও পাকিস্তানের সংবাদ সংস্থা ‘দ্য ডন’ এবং ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, RAW-এর ‘টার্গেট কিলিং’য়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কাছে। দাবি করা হচ্ছে তাঁদের নির্দেশেই নাকি চলছে হত্যাকাণ্ড। আর এই আবহে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ দাবি করেছে যে, ২০২১ সালের পর থেকে পাক ভূমিতে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা যেন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। পরিকল্পনা মাফিক খুঁজে খুঁজে জঙ্গি নেতাদের টার্গেট করছে ভারতীয় গুপ্তচরেরা এবং সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে তাঁদের শরীর। টার্গেট কিলিং পদ্ধতিতে নাকি এখনও পর্যন্ত অন্তত ছ’জনকে মেরেছে নয়াদিল্লি। আর এই গুপ্তচরের প্রসঙ্গ উঠছে অজিত ডোভালের পুরোনো এক বক্তব্যকে ঘিরে।
পাল্টা বিস্ফোরক মন্তব্য ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের
২০১৪ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বলেছিলেন যে, ‘‘ইসলামাবাদের সঙ্গে খোলা ময়দানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া অনেক বড় বোকামি হবে। তাই বলে আমরা চুপ করে বসে নেই। পাকিস্তানকে শায়েস্তা করার আরও অন্য অনেক উপায় রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল লুকিয়ে তাদের শাস্তি দেওয়া। কারণ আমাদের চেয়ে পাকিস্তানের দুর্বলতা বেশি।’’ তবে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদন খারিজ করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ‘‘পাকিস্তান আর সন্ত্রাসবাদ পরস্পর একে অপরের পরিপূরক। সেক্ষেত্রে আমেরিকার সাবেক বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন ইসলামাবাদ এর সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন সেটা একদম ঠিক। আর তা হল, “আপনার পোষা সাপ শুধুমাত্র প্রতিবেশীকে কামড়াবে তা ভাবা ভুল।’’