‘রাজাকার’ কারা? এর মানেই বা কী? বাংলাদেশে এদের অবদান জানলে ঘৃণা আসবে

Published on:

Razakar bangladesh রাজাকার, বাংলাদেশ

কলকাতাঃ কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এক প্রকার রক্তের বন্যা বইছে সর্বত্র। সেইসঙ্গে জেলায় জেলায় হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এখন হিংসা রূপ ধারণ করেছে। জায়গায় জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে এসবের মাঝেই ফিরল মুক্তিযোদ্ধাদের সেই ঐতিহাসিক স্লোগান যা এই সময়ে শোনার জন্য হয়তো কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। আর সেই স্লোগান হল ‘রাজাকার’।

আন্দোলনে ফিরল ‘রাজাকার’ স্লোগান

২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনে উঠল ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার’ স্লোগান। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। ৭১-এর যুদ্ধে এই স্লোগান গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তবে মাঝে এত বছর পেরিয়া যাওয়ার পর আবারও একবার এই স্লোগান শোনা গেল। গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী উচ্চ বেতনের সরকারি চাকরির জন্য বৈষম্যমূলক এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীরদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের পক্ষপাতিত্বমূলক একটি নিয়োগ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছেন। আর এই বিক্ষোভ এখন হিংসার রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে বহু মানুষের প্রাণহানিও হয়েছে। এই ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে রেখে দিয়েছে।

১৩৩ জনের মৃত্যু!

বাংলাদেশের কোটা বিরোধী আন্দোলনে ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে ১৩৩ জনের। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে বহু পুলিশ কর্মীরও। পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে সেনাকে ‘শ্যুট অ্যাট সাইট অর্ডার’-এরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে যে কোনও রকমের জমায়েত অথবা বিক্ষোভ মিছিলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা ব্যবস্থা এবং ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা (কোটা) সুবিধা না পায়, তাহলে কে পাবে? রাজাকারদের নাতি?’ এরপরে বিক্ষোভ আরও মাত্রা ধারণ করে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘কে তুমি? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার’। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বিদ্যুতের গতিতে ভাইরাল হয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিখ্যাত স্লোগানের একটি রূপান্তর হয়ে ওঠে, ‘আমরা কারা? বাঙালি।’

‘রাজাকার’ শব্দ-এর অর্থ কী?

এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে ‘রাজাকার’ শব্দ-এর অর্থ কী? জানলে অবাক হবেন, এই ‘রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশে অত্যন্ত অপমানজনক। ‘রাজাকার’ শব্দটি দেশে অবমাননাকর বলে মনে করা হয় এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার সাথে জড়িত, যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামেও পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি, আখরা চিনিয়ে দিতে পাকিস্তানের সেনাকে সাহায্য করেছিল একদল পাকিস্তানপন্থী পূর্ববঙ্গীয় বাসিন্দা৷ পরবর্তী কালে এমন পাকিস্তানপন্থী মানুষদের দলও গঠন করেছিল পাকিস্তানি সেনা৷ তাদের বলা হত ‘রাজাকার’ বাহিনী। স্বাধীনতার যোদ্ধাদের কাছে এই ‘রাজাকার’ বাহিনী ছিল বিশ্বাসঘাতকদের দল। এক কথায় বলতে গেলে রাজাকার হল ভলান্টিয়ার। ‘রাজাকার’ শব্দটি হায়দরাবাদে ব্যবহৃত ‘রেজাকার’ শব্দ থেকে এসেছে।

WhatsApp Community Join Now

আরও পড়ুনঃ মানতে হবে ১৩টি নিয়ম, DA দাবির মধ্যেই ভাতা নিয়ে কড়া অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের

এক রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, খুলনা জেলার আনসারি আলি রোডে সর্বপ্রথম ১০০ জন পাকিস্তানপন্থীদের নিয়ে ‘রাজাকার’ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেছিল পাকিস্তান বাহিনী৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফ ‘রাজাকার আইন’ও চালু করেছিলেন, যেখানে রাজাকারদের মাসিক বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একটা সময়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশে এই ‘রাজাকার’দের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় ৫০ হাজারে৷

সঙ্গে থাকুন ➥
X