বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের পর এবার শিরোনামে এশিয়া! গোটা বিশ্বে যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ যেন আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সংঘর্ষ। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান কারণ কিন্তু এক শিব মন্দির। হ্যাঁ, ভগবান শিবের ঐতিহাসিক মন্দিরকে কেন্দ্র করেই বারবার দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ। কিন্তু কেন? জেনে নিন এর পেছনের ইতিহাস।
শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ
গত বুধবার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি চললে মৃত্যু হয় দুই থাই নাগরিকের। থাইল্যান্ডের প্রশাসন দাবি করে, কম্বোডিয়া থেকে ছুটে আসা রকেটের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ওই দুই বেসামরিক নাগরিকের। আর এরপরই প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকে থাইল্যান্ড।
সেই মতোই, বৃহস্পতিবার F-16 যুদ্ধবিমান থেকে কম্বোডিয়ার সেনাঘাঁটিতে জোরালো হামলা চালায় থাইল্যান্ড। রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই ঘটনায় মোট 12 জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সাথেই আহত হয়েছেন 14 জন সেনা ও 32 জন বেসামরিক নাগরিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের কারণ ওই এক শিব মন্দির।
কিন্তু কি এমন রয়েছে ঐ শিব মন্দিরে? কেনই বা শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়ালো দুই দেশ? জানতে হলে ফিরে যেতে হবে অতীতে। আসলে দাংরেক পর্বতের উপর অবস্থিত প্রিয়া বিহার শিব মন্দিরকে নিয়ে দুই দেশের দ্বন্দ্ব আজকের নয়। ইউনেস্কোর তরফে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পাওয়া এই শিব মন্দির নিয়ে থাইল্যান্ডের দাবি, এই মন্দির আসলে তাদের।
এদিকে থাইল্যান্ডের দাবি উড়িয়ে কম্বোডিয়া আবার বলছে অন্য কথা। কিন্তু ইতিহাসে কী লেখা? ইতিহাস ঘাটলে জানা যাবে, সর্বপ্রথম রাজা দ্বিতীয় উদয়াদিত্য বর্মণ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পুরনো তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, বর্তমানে এই মন্দিরের অবস্থান কিন্তু কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি এই মন্দির খেমার রাজত্বের বড় নিদর্শন।
তবে ওই মন্দির চত্বরে মূলত দুটি ঐতিহাসিক মন্দির রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মন্দিরগুলির অবস্থান হেমার হাইওয়ের গিরিপথ অংশে। আর এই গিরিপথই কিন্তু কৌশলগতভাবে কম্বোডিয়ার আঙ্কোর ভাটকে থাইল্যান্ডের সাথে যুক্ত করে। মূলত সেই সব কারণেই থাইল্যান্ডের দাবি উড়িয়ে কম্বোডিয়া বলে, ইমার রাজত্বের সীমারেখায় অবস্থিত এই মন্দির। ফলে এই মন্দিরে পূর্ণ অধিকার রয়েছে কম্বোডিয়ার! এদিকে আংশিকভাবে হলেও এটি থাইল্যান্ডেরও ভূখণ্ড।
Cambodia and Thailand are fighting for ownership of the Preah Vihear Temple, a 1,100-year-old Lord Shiva temple. pic.twitter.com/BY8IJQ48U7
— Garuda (@garudazhwar) July 24, 2025
অবশ্যই পড়ুন: ডার্বিতে জেতাই লক্ষ্য! মোহনবাগানের বিরুদ্ধে নাম লেখালেন ইস্টবেঙ্গলের ৬ সিনিয়র ফুটবলার
কম্বোডিয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে থাইল্যান্ডের দাবি, এই মন্দির সুরিন প্রদেশে অবস্থিত। মূলত দু দেশের মধ্যে এই দ্বিমত নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ওই মন্দির চত্বরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া ঠান্ডা লড়াই শেষ পর্যন্ত ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে। বলা বাহুল্য, ওই ঐতিহাসিক শিব মন্দির নিয়ে থাইল্যান্ডের ভিন্ন মত থাকলেও সমস্ত দিক মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত কিন্তু কম্বোডিয়াকেই ওই মন্দিরের মালিকানা দিয়েছে।
তবে তাতেও মেলেনি সমাধান সূত্র! উত্তেজনা কমার বদলে ওই মন্দিরকে কেন্দ্র করে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বেড়েছে তিক্ততা! আসলে, ওই তীর্থক্ষেত্র নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলেও একে অপরের দাবি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। মূলত সেই কারণেই, অন্যান্য সময়ের মতো ফের ওই ঐতিহাসিক শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে জোরালো সংঘর্ষ।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |