সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: কখনো কি কল্পনা করেছেন, আপনি এমন কোনো দেশে বসবাস করেন, যে সেই দেশটি ধীরে ধীরে সাগরের জলে নীচের মিশে যাচ্ছে! হ্যাঁ, কিছুদিনের মধ্যে এমন একটি দেশ আর পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে না। কোনো সিনেমার কল্পকাহিনী নয়, বরং এটাই বাস্তব। আসলে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র টুভালুর (Tuvalu) এরকমই করুণ অবস্থা হবে কিছুদিনের মধ্যেই।
হারিয়ে যাওয়ার পথে একটি ছোট্ট দেশ
অস্ট্রেলিয়া এবং হাওয়াইয়ের মাঝামাঝি অবস্থিত এই ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র টুভালুর জনসংখ্যা মাত্র 11,000। 9টি নিচু প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশ, যার গড় উচ্চতা মাত্র 6 ফুট। বিজ্ঞানীরা মনে করছে, 2050 সালের মধ্যে টুভালুর অর্ধেক সমুদ্রের নীচে ডুবে যাবে এবং 2100 সালের মধ্যে 90% ভূমি তলিয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই সমুদ্রের নোনা জল এখানকার মিষ্টি জলের কুয়ো, কৃষিজমি, ফসলে প্রবেশ করছে। আর এতটাই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে যে, মানুষজন মাটির উপরে গাছ লাগাতে সাহস পাচ্ছে না। বরং প্লাস্টিকের ড্রাম বা কাঠের বাক্সের ভিতরে গাছ লাগাচ্ছে।
দেশের অস্তিত্ব বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়া সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি
প্রসঙ্গত, 2023 সালে অস্ট্রেলিয়া এবং টুভালু Faleapili Union Treaty নামের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষরিত হয়, যা 2024 সাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। আর এই চুক্তির আওতায় প্রতিবছর 280 জন করে টুভালু বাসিন্দা অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবে স্থানীয়ভাবে বসবাস করতে, পড়াশোনা বা কাজের জন্য।
পাশাপাশি 2025 সালের 16 জুন থেকে 18 জুলাই পর্যন্ত এই ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া চলে এবং সবথেকে অবাক করার বিষয় হল, 517 জন ইতিমধ্যে আবেদন করেছে। অর্থাৎ, দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা এখন এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। আর এরকম দেশান্তর পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই প্রথমবার।
More than 80% of Tuvalu citizens apply for world-first Australian climate visa
➡️ https://t.co/ePsiDB0EPG pic.twitter.com/Vx2vKAKYwT— FRANCE 24 (@FRANCE24) July 23, 2025
নাসার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, 2050 সালের মধ্যে রাজধানী ফুনাফুতির অর্ধেক অংশই জলে ডুবে যাবে। যেখানে দেশের মোটামুটি 60% জনসংখ্যার বাস করে, সেখানে জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। সামুদ্রিক ঝড় থেকে শুরু করে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নোনা জলের ঢেউ ধ্বংস করে দিচ্ছে টুভালু নামের ছোট্ট দেশটিকে।
অস্ট্রেলিয়া সরকার মনে করছে, এই মাইগ্রেশন হবে প্রাউড মাইগ্রেশনের আওতায়। কিন্তু ওখানে প্রশ্ন উঠছে, দেশান্তর কি সত্যিই গর্বের নাকি প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে? টুভালুর মানুষজন এখনও দেশের সংস্কৃতি ও শিকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তবে এই মুহূর্তে যারা ভিসার জন্য আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ।
আরও পড়ুনঃ ভিসা ছাড়াই কাটান বিদেশে ছুটি, ভারতীয়দের জন্য সেরা সুযোগ নিয়ে এল ৫ দেশ
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে। মূলত চরম আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ একেবারে আচ্ছন্ন করে রাখছে। আর ঘটনাটি এই প্রথমবার বিশ্বকে পুরো দেশের অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এখন দেখার ভবিষ্যতে এই দেশটির কী হয়।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |