বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ভারত-পাক সংঘাতে খোলাখুলি পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল তুরস্ক (Turkey)। প্রতিমুহূর্তে ভারতের তরফে সব রকম সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও সন্ত্রাসবাদের দেশকে সমর্থন, একেবারেই ভাল চোখে নেননি দেশবাসী। আর এরপরই তুর্কি বয়কটের জোয়ার আসে দেশজুড়ে। আচমকা বেঁকে বসেন হাজার হাজার দেশীয় পর্যটক।
মুহূর্তের ব্যবধানে বাতিল হয়ে যায় তুরস্কের একাধিক ফ্লাইট বুকিং ও হোটেল। যেই ধাক্কাটা সরাসরি গিয়ে পড়েছে তুরস্কের পর্যটন শিল্পে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতীয় পর্যটকদের বাতিলের খাতায় পড়ে ধুঁকছে তুর্কির পর্যটন শিল্প। প্রকাশ্যে আসা আরও কিছু রিপোর্ট বলছে, দেশবাসীর তুর্কি বিরোধী মনোভাবের কারণে গত এক মাসে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের শেয়ার অন্তত 10 শতাংশ কমে গেছে।
ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে তুরস্কের পর্যটন শিল্প
পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বায়ুসেনার একের পর এক মিসাইল হামলায় একপ্রকার কোনঠাসা অবস্থা হয়েছিল পাকিস্তানের। তবে মার খেয়েও যেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে বুক চিতিয়ে উঠেছিল সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতা। যদিও সেই দম্ভ ফের ঘুঁচিয়ে দেয় দিল্লি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে বেধাক্কা পেটানি খাওয়ার সময়কালে, পাকিস্তান পাশে পেয়েছিল দুই মুসলিম দেশ তুরস্ক ও আজারবাইজানকে।
ভারতের সাথে সংঘাতে এই দুই মুসলিম রাষ্ট্র যেন একেবারে পাকিস্তানকে কোলে তুলে আসল রূপ দেখায়। যা মোটেই ভাল চোখে নেয়নি ভারতবাসী। আর এরপর থেকেই শুরু হয় তুরস্ক ও আজারবাইজান বয়কটের ডাক। জানিয়ে রাখি, পাকিস্তানকে খুল্লামখুল্লা সমর্থনের কারনে ভারতীয়দের রোষানালে পড়ে ব্যবসা খোয়াতে বসেছে তুরস্ক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে মেকমাইট্রিপ জানিয়েছিল, মাত্র এক সপ্তাহে তুরস্কের ফ্লাইট বুকিং 60 শতাংশ কমেছে, অন্যদিকে বাতিলের পরিমাণ বেড়েছে 250 শতাংশ। যা সত্যিই অভাবনীয়!
সম্প্রতি ইজমাইট্রিপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নিশান্ত পিট্টি জানিয়েছেন, 2023 সালে কম করে 2.87 লক্ষ্যেরও বেশি ভারতীয় পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণে গিয়েছিলেন। যা 2022 আর্থিক বছরের তুলনায় 2.3 লক্ষ অর্থাৎ 25 শতাংশ বেশি। ইজমাই ট্রিপের কর্ণধার অনুমান করেছিলেন, তুরস্কে প্রত্যেক ভারতীয় পর্যটকের কমপক্ষে মাথাপিছু ব্যয় হয়েছে 1200 থেকে 1500 ডলার। পিট্টির ধারণা, শুধুমাত্র 2023 সালে ভারতীয় পর্যটকদের থেকে 350-400 মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় 3000 কোটি টাকা রোজগার করেছে তুরস্ক।
অবশ্যই পড়ুন: বাংলাদেশি মেয়েদের বিয়ে করার আগে সাবধান! সতর্কতা ঢাকার চিনা দূতাবাসের
তুর্কি এয়ারলাইন্সের শেয়ারে বিরাট পতন
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, ভারতীয়দের বয়কটের মুখে পড়ে তুরস্কের অন্যতম বিমান সংস্থা টার্ক হাভা ইয়োল্লারি এও বা টার্কিশ এয়ারলাইন্সের শেয়ারের দাম অন্তত 312.75 টার্কিশ লিরা থেকে 279.75 টার্কিশ লিরায় এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে তুরস্কের ওই বিমান সংস্থার শেয়ার কমপক্ষে 10.55 শতাংশ কমেছে। বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, ভারতীয়দের এমন অবস্থান অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তুর্কির বিমান সংস্থাগুলির শেয়ার তরতরিয়ে কমতে থাকবে। বলা বাহুল্য, ভারতীয় পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় তুরস্কের পর্যটন শিল্প যে মুখ থুবড়ে পড়বে সেই আভাস অনেক আগেই দিয়ে রেখেছেন বেশ কয়েকজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ।