বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: গত এপ্রিলে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নীতি গোটা বিশ্বকে সজোরে ধাক্কা দিয়েছিল। ট্রাম্পের সেই শুল্ক চাপ সামলাতে হচ্ছে ভারতকেও। মুখে বন্ধু বলে গলা ফাটালেও ভারতের ওপর ভাল পরিমাণের শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা (America)। তাছাড়াও ট্রাম্পের আরেক প্রিয় বন্ধু পাকিস্তানকেও বইতে হচ্ছে শুল্কের বোঝা।
এমতাবস্থায়, ভারতীয় পণ্যে আরোপিত 50 শতাংশ শুল্ক সামলে উঠতে আমেরিকার সাথে আলোচনায় বসতে চেয়েছে দিল্লি। ওদিকে একেবারে বুক চিতিয়ে আমেরিকার সাথে শুল্ক এবং বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে পাকিস্তানও। এহেন আবহে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভারতকে দূরে রেখে আগে পাকিস্তানের সাথে হাত মেলাবেন ট্রাম্প?
আমেরিকার সাথে চুক্তি সেরেছে পাকিস্তান!
বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে দাবি করছে, পাকিস্তান এবং আমেরিকা দুই দেশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। ইসলামাবাদ চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, সম্প্রতি পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মহম্মদ আওরঙ্গজেব ও আমেরিকার বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটিনিকের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সে একটি বৈঠক হয়, সেখানেই নাকি বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তি হয়েছে দুই দেশের!
পাকিস্তানের ওপর বাণিজ্য শুল্ক চাপানোর কারণ?
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট ঘেঁটে জানা গেল, আমেরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য ক্ষেত্রে 3 মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ভুগতে হচ্ছে আমেরিকাকে। মূলত সেই কারণকে দাঁড় করিয়েই পাকিস্তান থেকে আসা পণ্যগুলির ওপর 29 শতাংশ রপ্তানিশুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে শোনা যাচ্ছে, পারস্পারিক বাণিজ্য নীতি নিয়ে খুব শীঘ্রই পাকিস্তানের সাথে আরও বড় পর্যায়ের বৈঠকে বসতে পারে আমেরিকা।
পাকিস্তানের বড় দাবি
অনেকেই হয়তো জানেন না, আসলে ট্রাম্প বিশ্বাস করেন বিশ্বের এমন কিছু দেশ যারা ট্রাম্পের ওপর অযথা অতিরিক্ত শুল্ক চাপাচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেই গত এপ্রিলে শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। আর এসবের মাঝেই হঠাৎ নতুন দাবি তুলল পাকিস্তান। সম্প্রতি পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে জোরাজুরির মাঝেই পাকিস্তান ও আমেরিকা ক্রমশ নিজেদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে।
অবশ্যই পড়ুন: আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক ভারতীয় ক্রিকেটারের! ফাঁস বড় তথ্য
উল্লেখ্য, গত বছরের হিসেব অনুযায়ী, 2024 আর্থিক বছরে পাকিস্তান ও আমেরিকার মধ্যে মোট পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল 7.3 বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় 60 হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে আমেরিকা পাকিস্তানে 2.1 বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা ছিল 2023 আর্থিক বছরের তুলনায় 4.4 শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে গত আর্থিক বছরে আমেরিকায় যাওয়া পাকিস্তানি পণ্য অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে আমেরিকার আমদানি ছিল 5.1 বিলিয়ন ডলার, যা 2023 আর্থিক বছরের তুলনায় অন্তত 4.9 শতাংশ বেশি। আর এই পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দেয় যে, 2024 আর্থিক বছরে পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল কমপক্ষে 3 বিলিয়ন ডলারের।