বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: খালিস্তানি ইস্যু নিয়ে গঙ্গা দিয়ে জল বয়ে গিয়েছে অনেক। তবে সেই সব সংঘাত পর্ব নিয়ে কানাডার সাথে মনোমালিন্য কাটিয়ে অবশেষে ওদেশে সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল অর্থাৎ সোমবার এবং আজ 17 তারিখ, মঙ্গলবার এই দুইদিন কানাডার কানানস্কিস শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে G7 বৈঠক (G7 Summit)।
বর্তমানে সেই বৈঠকে রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বলে রাখি, খালিস্তানি সমস্যা নিয়ে কানাডা ও ভারতের মধ্যে সংঘাত পর্বের পর এই প্রথম কানাডা সফরে রয়েছেন মোদি। আর এরপরই প্রশ্ন উঠছে ভারতের G7 বৈঠকে অংশগ্রহণ নিয়ে। কৌতূহলের বশে উঠছে নানান প্রসঙ্গও।
G7 বৈঠক আসলে কী?
G7 বা গ্রুপ অফ সেভেন বৈঠকটি মূলত বিশ্বের সাতটি উন্নত অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে হয়ে থাকে। এই সাত দেশ এক বৈঠকে মিলিত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসে। বলে রাখি, 1973 সালে খনিজ তেলের ব্যাপক আকাল দেখা দিলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিল! ফলত, সেই অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতেই G7 গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল সাতটি দেশ। আর সেই থেকেই G7 সামিটের পথ চলা।
G7-র সদস্য নয় ভারত
অনেকেই হয়তো ভাবেন ভারত G7 বা গ্রুপ অফ সেভেনের সদস্য, তবে এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। আসলে G7 গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলির মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, জাপান, ইতালি, আমেরিকা ও কানাডা। ভারত কিন্তু মোটেই এই গ্রুপের অংশ নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায় প্রতিবারই G7 সামিট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই ভারতের কাছে আমন্ত্রণ পত্র চলে আসে। কিন্তু কেন?
সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও কেন G7 সামিটে ডাক পায় ভারত?
সদস্য দেশ না হওয়া সত্ত্বেও ভারত ঠিক কোন কারণে G7 বৈঠকে ডাক পায় তা জানতে কৌতুহলী অনেকেই। সেই প্রসঙ্গে বলি, নিয়ম অনুযায়ী, G7 বৈঠকের আয়োজক দেশ গোষ্ঠীর বাইরে থাকা যেকোনও দেশকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। আর সেই সূত্রেই, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে G7 বৈঠকে ডাক পায় ভারত। বলা বাহুল্য, চলতি বছরের বৈঠকে ভারতের পাশাপাশি আমন্ত্রণ পেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, IMF, বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রসংঘ।
আন্তর্জাতিক মহলে বারংবার বিতর্কে জড়ায় G7
মূলত অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে G7 বা গ্রুপ অফ সেভেনের জন্ম হলেও বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলে বহুবার সমালোচিত হয়েছে এই বিশেষ গোষ্ঠীটি। কিন্তু এর নেপথ্যে কোন কারণ? জানা গিয়েছে, মূলত GDP হ্রাসের কারণেই বারংবার বিশ্বের দরবারে বিতর্কের মুখে পড়েছে G7 গোষ্ঠী। ফলত, স্বাভাবিকভাবেই এই G7 বৈঠকের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বেশিরভাগেরই দাবি, বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ চিন, অন্যদিকে জাপানকে টেক্কা দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ অর্থনৈতিক দেশ হয়ে উঠেছে ভারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই দুই দেশের কেউই G7 গোষ্ঠীর স্থায়ী সদস্য নয়।
অবশ্যই পড়ুন: ৩,০০০ কোটির চুক্তি! আফ্রিকায় ১৫০টি মেক ইন ইন্ডিয়া লোকোমোটিভ পাঠাচ্ছে রেল
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের G7 বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য পুরনো মনোমালিন্য ভুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানাতে ফোন করেছিলেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। তবে খালিস্তানিদের নিয়ে সমস্যার মাঝে প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফরে যাবেন কিনা তা নিয়ে জল ঘোলা হয়েছিল অনেকটাই, তবে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জল্পনাকে পেছনে ফেলে কানাডায় G7 বৈঠকে যোগ দিলেন মাননীয়। যে ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বহু কূটনৈতিক।