সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বিশ্বের রাজনীতির মঞ্চে নতুন করে আলোচনার দানা বাঁধিয়েছে ইরান এবং ইসরাইল। হ্যাঁ, এই দুই দেশের মধ্যে দিনের পর দিন সংঘাত বেড়েই চলেছে। আর এই সামরিক উত্তেজনার আঁচ যে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যে পড়ছে এমনটা নয়। কারণ এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ভারতের উপরেও। কিন্তু কীভাবে? আসলে সবথেকে বড় আশঙ্কার জায়গা তৈরি হচ্ছে জ্বালানি তেলের দামে (Fuel oil Price)।
আন্তর্জাতিক বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে তেলের দাম
সম্প্রতি বিশ্ববাজরের মঞ্চে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম হঠাৎ করে ব্যারেল প্রতি বেড়ে 78 ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। হিসাব বলছে, মাত্র দুই দিনের মধ্যেই 11 শতাংশ দাম বেড়েছে। আর যদি এই সংঘাত দিনের পর দিন চলতে থাকে, তাহলে আগামী দিনে ব্যারেল প্রতি দর 100 থেকে 120 ডলারের গিয়ে ঠেকতে পারে বলে মনে করছে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ।
সংঘাতের মূল কেন্দ্র হরমুজ প্রণালী
বলে রাখি, বিশ্বের অন্যতম তেল রপ্তানিকারক দেশ ইরান। ভারত সহ বহু দেশ তাদের কাছ থেকেই তেল আমদানি করে। আর এই তেল সরবরাহের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালী। হ্যাঁ, এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়েই বিশ্ববাজারে প্রায় 20 শতাংশ অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করা হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এর ফলে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে ভারতের তেলের বাজারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, ভারত এবার তেলে আমদানিতে বিরাট ধাক্কা খেতে পারে। কারণ, ভারত তার মোট আমদানিকৃত তেলের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এই পথ দিয়েই আনে।
ভারতের অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা
যদি এই সরবরাহের ঘাটতি দেখা যায়, তাহলে ভারতের বাজারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম লাগাম ছাড়া বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এতে করে শুধু তেলের দাম নয়, বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। ফলে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, সবার হাহাকার করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।
এমনকি শেয়ারবাজারেও এর আঁচ পড়তে পারে বলে মনে করছে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে উদ্বেগ। আর সেই সঙ্গে টাকার মূল্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ মধ্যবিত্তদের ভয় ধরাচ্ছে সোনার দর, রুপো নিয়েও খারাপ খবর! আজকের রেট
ভারতের পাশাপাশি বিপাকে পড়বে চিনও
তবে বলে রাখি, ইরান যে শুধুমাত্র ভারতে তেল আমদানি করে, এমনটা নয়। ড্রাগনের দেশের তেলের ভান্ডারও অনেকটাই ইরানের উপরে নির্ভরশীল। তাই ইরান যদি হঠাৎ করে এই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার প্রভাবে চীন, জাপান সহ দক্ষিণ কোরিয়ার মত বিভিন্ন দেশগুলি অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার ইরান কী সিদ্ধান্ত নেয়।