প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কিছুদিন আগেই ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড় ডানার তাণ্ডব দেখা গিয়েছিল। তবে বঙ্গবাসী সেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেলেও, ভারী বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পায়নি। মুষলধারায় টানা দুই দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছিল রাজ্য জুড়ে। তবে এই মুহূর্তে আবহাওয়ার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন হলেও মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। ভারী বৃষ্টির জেরে বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুরের বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। এই দুর্যোগে কৃষকদের প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আর ক’দিন পরেই ধান কাটার সময়। নতুন ফসল ঘরে আনার সময় ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল বড় সর্বনাশ। প্রবল বৃষ্টির জেরে জলে ডুবে গিয়েছে ধান গাছ। এমনকি সবজির জমিতেও জল থৈ থৈ করছে। বাঁকুড়ার কোতুলপুরে কংসাবতী সেচ ক্যানাল ভেঙে হরিহট্টপুর মৌজা সংলগ্ন এলাকায় প্লাবিত হয় বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। রাইপুর, সারেঙ্গাতেও টানা বৃষ্টির জেরে জল জমে যায় বেশিরভাগ চাষের জমিতে। গত মাসেই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এই জেলায়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের মাঠে বন্যাযন্ত্রণা বাড়ল কৃষকদের। আর এই আবহে তাই কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়াল রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল নবান্ন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে ৬১ লক্ষ ৫৫ হাজার কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর এই ক্ষতিপূরণ বাংলা শস্য বিমার (Bangla Shasya Bima) মাধ্যমে দেওয়া হবে। এতে একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের আর্থিক চাপ কমবে, অন্যদিকে ইন্সুরেন্স ক্লেইমও করা যাবে। আর এই বাংলা শস্য বিমা হল কৃষকদের জন্য একটি সরকারী প্রকল্প। এর মাধ্যমে কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে সম্পূর্ণটা তুলে ধরা হল বিস্তারিত।
Bangla Shasya Bima-য় আবেদনের যোগ্যতা
যেসব অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি বা ভূমিধসে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, সেইসব অঞ্চলের কৃষকরা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এবং ২০২৪-এর খরিফ মরশুমে ধান বা ভুট্টার চাষ যে সকল কৃষকরা করেছেন তারা পাবেন।
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ
- যদি ফসলের ৫০% এর বেশি রোপণ ব্যর্থ হয়, কৃষকরা তাহলে এই বীমার মাধ্যমে ২৫% ক্ষতিপূরণ পাবেন।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৫০% বা তার বেশি ফসল ক্ষতি হলে বীমার ৫০% ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
- শিলাবৃষ্টি বা ভূমিধসে ক্ষতি হলে, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
- ফসল কাটার পর যদি ঘূর্ণিঝড় বা অকাল বর্ষণে ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
আবেদনের পদ্ধতি
এই প্রকল্পে আবেদন করতে হলে কৃষকদের গ্রাম পঞ্চায়েত বা কৃষি অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা দিতে হবে। ধানের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ আগামী ৩০ নভেম্বর ২০২৪ নির্ধারিত হয়েছে। আর জন্য প্রকল্পে কৃষকদের কোনো প্রিমিয়াম দিতে হবে না,পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমস্ত খরচ বহন করবে।