শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা কার না থাকে। আপনারও থাকেন নিশ্চয়ই। অনেকেই আছেন যারা অদূর ভবিষ্যতের কথা ভাবনা চিন্তা করে হয় ব্যাংকে টাকা জমান নয় তো কিছু না কিছু জিনিসে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। আবার অনেকেই আছেন যারা কিনা দেশের সবথেকে বড় বীমা সংস্থা LIC-তে মাসের পর মাস টাকা বিনিয়োগ করেন। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি…দেশের সবথেকে বড় বীমা কোম্পানি। বর্তমান সময়ে দেশের বহু মানুষ এই LIC-র সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে জড়িত। কর্মরত কর্মী হোক কিংবা সাধারণ মানুষ, বহু মানুষ এই LIC-র সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। তবে এবার এই এলআইসি নিয়েই প্রকাশে এমন এক খবর উঠেছে যা শুনলে যে কোনও মানুষ ধাক্কা খেতে পারেন।
বিশেষ করে যাদের এলআইসি করা রয়েছে সেই সকল গ্রাহক ধাক্কা খেতে পারেন। নতুন মাসে অর্থাৎ অক্টোবর মাস থেকে নিজেদের একটি নিয়মে বিরাট রকমের পরিবর্তন এনেছে দেশের এই বড় বীমা সংস্থা। এখন আপনিও জানতে ইচ্ছুক যে এলআইসি কী নিয়মে পরিবর্তন ঘটিয়েছে? তাহলে বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই লেখাটির উপর।
গ্রাহকদের ধাক্কা দিল LIC
দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে এলআইসি হয়তো এবার নিজেদের প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেবে। এবার সকলের সেই আশঙ্কা সত্যি করে অক্টোবর মাস থেকে প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দিল এলআইসি। এই বছরের শুরুতে, ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (আইআরডিএআই) তাদের জীবন বীমা পলিসি থেকে বেরিয়ে আসা পলিসিহোল্ডারদের আরও ভাল রিটার্ন দেওয়ার জন্য Surrender Value সম্পর্কিত সংশোধিত নির্দেশিকা চালু করেছিল।
Surrender Value কী
এখন আপনার মাথাতেও নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে যে Surrender Value কী? আসলে বীমাতে, Surrender Value পলিসির মেয়াদপূর্তির তারিখের আগে পলিসি ফেরত দেওয়ার সময় বীমা সংস্থা কর্তৃক পলিসিধারককে প্রদত্ত পরিমাণকে বোঝায়। যদি পলিসিধারক পলিসি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে তাকে আয় এবং সেভিংসের একটি অংশ দেওয়া হবে। এই বীমা বন্ধ করলে যাতে গ্রাহক আগের থেকে বেশি টাকা পান, তা নিশ্চিত করতে এসেছে নতুন নিয়ম।
নতুন মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে নিয়ম
এলআইসির তরফে যে নিয়ম লাগু করা হয়েছে সেটা অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রকল্পে প্রিমিয়াম বাড়ছেই। সেই সঙ্গে এনডাওমেন্ট পলিসিতে থাকছে না দুরারোগ্য রোগের সুরক্ষা বাবদ বাড়তি বিমা করানোর সুবিধা বা ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার। নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে সেটার জন্য পড়েছেন বিভিন্ন এজেন্টরা। তাদের কমিশনে পড়েছে কোপ। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, এনডাওমেন্টে ন্যূনতম বিমামূল্য হচ্ছে দ্বিগুণ। এখন এটি ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ করা হয়েছে। এর আগে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিমা কেনা যেত, তবে এখন সেটাও কমিয়ে ৫০ বছর করা হয়েছে।
যদিও উল্টো সুর শোনা গিয়েছে এলআইসি এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর গলায়। তিনি বলেন, “ন্যূনতম বিমার অঙ্ক ২ লক্ষ টাকা করায় গ্রাহকদের প্রায় দ্বিগুণ প্রিমিয়াম দিতে হবে। এতে মূলত ক্ষতি হবে গ্রামের মানুষের। আমরা ১ লক্ষের ছোট ছোট পলিসি করিয়ে তাঁদের বিমার আওতায় আনতাম। এখন অনেকেই প্রকল্প কিনতে পারবেন না। এতে কেন্দ্রের সব মানুষকে বিমার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত হবে। পাশাপাশি, কমিশন ছাঁটায় প্রকল্প বিক্রিতে উৎসাহ হারাবেন এলআইসি-র এজেন্টরা। বিভিন্ন সুবিধা কমায় প্রকল্প সারেন্ডারের প্রবণতা বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থাকছে।’’
এনডাওমেন্ট পলিসি কী?
এনডাওমেন্ট পলিসিতে ক্যানসার, কিডনি বিকল, হৃদযন্ত্র খারাপের মতো কিছু রোগে বিমাকারী যদি মারা মারা যায় তাহলেও কিন্তু বিমার টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য বাড়তি প্রিমিয়াম দিয়ে মূল প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে ‘রাইডার’ কিনতে হয়। যদিও নতুন ব্যবস্থায় এই সুবিধা তুলে দিয়েছে এলআইসি বলে খবর।