সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ ভারত এক বিরাট অর্থনৈতিক শক্তিসমৃদ্ধ দেশ। একথা সবারই জানা। তবে ভারতের প্রতিটি রাজ্য এই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে বেশ কিছু রাজ্য তাদের কৃষি, পর্যটন এবং প্রযুক্তিগত শিল্পের মাধ্যমে নিজেদেরকে ধনী রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারতের শীর্ষ ১০টি ধনী রাজ্য কোনগুলি এবং তাদের অর্থনীতির প্রধান উৎস কী।
১) মহারাষ্ট্র
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য হল মহারাষ্ট্র, যার মোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (GSDP) ২০২৪-২৫ সালে ৪২.৬৭ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই রাজ্যের অর্থনীতির মূল শক্তি হল উৎপাদন শি, বিনোদন, ব্যাংকিং এবং তথ্যপ্রযুক্তি। মুম্বাই ভারতের ‘অর্থনৈতিক রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত, যেখানে দেশের প্রধান কর্পোরেট অফিস এবং শেয়ার বাজার অবস্থিত।
২) তামিলনাড়ু
অনেকেই হয়তো জানেনা, যে তামিলনাড়ু ভারতের দ্বিতীয় ধনী রাজ্য। তামিলনাড়ুর ২০২৪-২৫ সালের সম্ভাব্য GSDP ৩১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। এই রাজ্যটি মূলত উৎপাদন শিল্প, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এছাড়া তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী অবস্থান বাণিজ্য ও রপ্তানির জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যা রাজ্যটিকে ধনীদের কাতারে তুলে এনেছে।
৩) কর্ণাটক
এই তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে কর্ণাটক। কর্নাটকের GSDP ২০২৪-২৫ সালে ২৮.০৯ লক্ষ কোটিে ছুতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যটির অর্থনীতির প্রধান উৎস হল তথ্যপ্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি, মহাকাশ গবেষণা এবং উৎপাদন শিল্প। আমরা সকলেই জানি যে, বেঙ্গালুরু ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ নামে পরিচিত। এই শহরটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রধান কেন্দ্র, যা রাজ্যটিকে তৃতীয় বৃহত্তম ধনী রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৪) গুজরাট
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে গুজরাট। গুজরাটের GSDP ২০২৪-২৫ সালে ২৭.৯ লক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই রাজ্যটি পেট্রোকেমিকাল, টেক্সটাইল ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পসমৃদ্ধি ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ এবং উন্নত পরিকাঠামো গুজরাটকে আরো বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় একটি রাজ্য বানিয়েছে।
৫) উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের সম্ভাব্য GSDP ২০২৪-২৫ সালে ২৪.৯৯ লক্ষ কোটি টাকা। এই রাজ্যটি মূলত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি যা চাল, গম, আখ উৎপাদনের অন্যতম কারখানা। পাশাপাশি উৎপাদন ও পরিষেবা খাতের সম্প্রসারণ রাজ্যটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
৬) পশ্চিমবঙ্গ
এই তালিকার ষষ্ট স্থানে রয়েছে বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান GSDP ১৮.৮ লক্ষ কোটি টাকা। রাজ্যটির অর্থনীতি মূলত কৃষি, পরিষেবা ও উৎপাদন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দ্রুত বৃদ্ধি এবং পাট ও ধানের উৎপাদন রাজ্যটিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
৭) রাজস্থান
রাজস্থানের GSDP ২০২৪-২৫ সালে ১৭.৮ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই রাজ্যটি অর্থনীতিতে পর্যটন, খনিজ সম্পদ এবং কৃষি খাতে বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রাজ্যটি ঐতিহাসিক দুর্গ, প্রাসাদ এবং সংস্কৃতির কারণে পর্যটন শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা এর আয়ের প্রধান উৎস।
৮) তেলেঙ্গানা
তেলেঙ্গানা রাজ্যটির সম্ভাব্য GSDP ২০২৪-২৫ সালে ১৬.৫ লক্ষ কোটি টাকা। এই রাজ্যটির অর্থনীতি মূলত তথ্য প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বায়োটেকনোলজি খাতের উপর নির্ভরশীল। হায়দরাবাদ একটি আইটি হাব হিসেবে পরিচিত, যেখানে গ্লোবাল প্রযুক্তি সংস্থাগুলি ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে, যা রাজ্যটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
৯) অন্ধ্রপ্রদেশ
অন্ধ্রপ্রদেশের সম্ভাব্য GSDP ২০২৪-২৫ সালে ১৫.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা। কৃষি এই রাজ্যের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস। বিশেষ করে উদ্যানপালন এই রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও উদ্যানশিল্পের সম্প্রসারণ রাজ্যের অর্থনীতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।
১০) মধ্যপ্রদেশ
এই তালিকার দশম স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। মধ্যপ্রদেশের GSDP ২০২৪-২৫ সালে ১৫.২২ লক্ষ কোটি টাকা। এই রাজ্যটি প্রধানত কৃষি, খনিজ এবং বনসম্পদের উপর নির্ভরশীল। এটি দেশের অন্যতম প্রধান সয়াবিন, গম এবং ডালের উৎপাদক রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এছাড়া শিল্পায়নের দিকেও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্যটি।