শ্বেতা মিত্র, কলকাতা: কথাতেই আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় আর সেই কথাটা যেন একদম হাতেনাতে প্রমাণ দিল বছর ১২-র বিক্রম নামের এক খুদে। এই বয়সে বাচ্চারা যখন খেলাধুলা কিংবা পড়াশোনা নিয়ে থাকে সেখানে মা এবং বোন, সেই সঙ্গে সংসারের দায়ভার ছোট্ট কাঁধে তুলে নিয়েছে বিক্রম। ট্রেনে হকারি করে সংসার চালানোর দায়ভার নিয়েছে সে। শুনে চমকে গেলেন তো, কিন্তু এটাই দিনের আলোর মতো সত্যি। বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছে, বাড়িতে রয়েছে ছোট বোন সেই সঙ্গে মা তো রয়েছেই। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কত কিছুই না করতে হয় সেটা যেন মাত্র ১২ বছর বয়সেই টের পেয়েছে বিক্রম। ট্রেনে হকারি করে এখন সে সংসার চালাচ্ছে।
ট্রেনে হকারি করছে ১২ বছরের বিক্রম
বর্তমানে বিক্রম সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। এদিকে বোনও সদ্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। বাবাহীন সংসারে এমনিতে দিন দিন হোঁচট খাওয়া কাকে বলে সেটা তো টের পেয়েছেই, সেইসঙ্গে পেটের খিদে মেটাতে মা ও ছেলে দুজনেই কাজ করছে। লক্ষ্য একটাই, বোনকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করা, সেইসঙ্গে সংসারের হাল ধরা। সংসারের অভাব মেটাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রমের মাকে। আর মায়ের সেই কষ্ট চোখে দেখতে না পেরে অত্যন্ত কম বয়সে নিজেও কাজের নেমে পড়েছে বিক্রম।
একদিকে নিজের পড়াশোনা, বোনের পড়াশোনা, সংসার খরচ সবটাই মায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করছে খুদে বিক্রম। জানা যায়, মায়ের পেটে বোন হয়েছে বলে, একসময়ে বাবা ছেড়ে চলে যায়। ব্যস তারপর থেকেই শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। এই বয়সে হয়তো কোনো বাচ্চা ভাবতেও পারবে না অভাব সমস্যা কাকে বলে। কিন্তু সবটাই হাসিমুখে মেনে নিয়ে দিন গুজরান হচ্ছে তিনজনের সংসারে।
বিক্রমের কাহিনী চোখে জল আনবে আপনারও
জানা যায়, বিক্রমের মা হোটেলে কাজ করে। বোনটা সবে, স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে থেকে দুই ভাই বোনের পড়াশোনা চালানো, মায়ের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই মায়ের পাশে খুঁটি হয়ে দাঁড়াতে, লোকাল ট্রেনে বাদাম বিক্রি করে পয়সা রোজগার করছে নাবালক বিক্রম। বিক্রম সবটা ভাগ করে নিয়েছে। এই বয়সে বাচ্চারা জীবনের ব্যালেন্স কাকে বলে সে ব্যাপারে ধারেকাছে থাকে না সেখানে বিক্রম একটা শিডিউল তৈরী করে নিয়েছে। সপ্তাহের মধ্যে তিন দিন ও পড়াশোনা করে, বাকি তিন দিন রেখেছে ওর ব্যবসার জন্য। স্বপ্ন রয়েছে চোখে, বোনকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবেই। বিক্রমের মাস গেলে টিউশনির খরচ ৫০০ টাকা। হোটেলে কাজ করে মা যতটুকু রোজগার করে, তা দিয়ে ছোট্ট সংসারে ঘর ভাড়া, খাবার জোগান দিতেই হিমসিম খায় মা। বাকি বোনের আর নিজের পড়াশোনার খরচ চালায় বিক্রম ট্রেনে হকারি করে।
ইন্ডিয়া হুড ‘শিশু শ্রম’কে প্রশ্রয় দেয় না। এই প্রতিবেদনের প্রধান উদ্দেশ্য হল বিক্রমের সহায়তা করা। যদি কোনও সংস্থা অথবা ব্যক্তি বিক্রমের পাশে দাঁড়াতে পারেন, তাহলে বাচ্চাটির জীবন শুধরে যাবে। ইন্ডিয়া হুডের তরফ থেকেও বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |