কলকাতাঃ শহরের কোলাহল ছেড়ে সকলেই কমবেশি চান ভালো কোনও শান্ত জায়গা থেকে ঘুরে আসতে। আর এর জন্য পারফেক্ট ডেস্টিনেশন হল পাহাড়। এমনিতেই কথায় আছে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে ফুল। আর এই সর্ষে ফুলের তাগিদে সারাবছরই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি হয় সমুদ্র নয়তো সমুদ্রের টানে ঘুরতে চলে যান। তবে আজ এই প্রতিবেদনে সমুদ্র নয়, পাহাড় নিয়ে আলোচনা হবে।
পাহাড় বলতেই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিরা এক কথায় হয় দার্জিলিং নয়তো সিকিম বোঝেন। দার্জিলিং এমনিতেই একটা বিখ্যাত হিল স্টেশন। তবে এই জায়গা এতটাই বিখ্যাত যে সারাবছরই মানুষ এখানে এসে ভিড় জমান। যদিও দার্জিলিংয়ে যতটা বিখ্যাত হিল স্টেশন রয়েছে, তার চেয়ে কম পরিচিত জায়গাও রয়েছে যেখানে গেলে আপনি প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবেন। বিশেষ করে আপনিও যদি একটু নিরিবিলি জায়গা পছন্দ করে থাকেন তাহলে আজ আপনাদের এমন কিছু ডেস্টিনেশনের খোঁজ দেওয়া হবে যেখানে গেলে আপনি হারিয়ে যাবেন, সেখান থেকে ফিরে আসতে চাইবেন না।
মিরিক
আজ প্রথমেই আলোচনা হবে মিরিক নিয়ে। এই মিরিক ৫,৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর শহর যেখানে আপনি লম্বা লম্বা পাইন গাছের সমাহার দেখতে পারবেন। সেইসঙ্গে এখানকার বিখ্যাত মিরিক লেক তাও দেখতে পারবেন। এই লেকে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন সেইসঙ্গে এখানকার প্রকৃতির আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
এই মিরিকের নিজের আলাদাই একটা চার্ম রয়েছে। এই জায়গা প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি, মিরিকের চারপাশে প্রকৃতির মাঝে হাঁটাচলা, পুরো হিমালয় রেঞ্জের প্যানোরামিক ভিউ আপকাকে মুগ্ধ করে রেখে দেবে। এছাড়াও এখানে অনেক চা বাগান রয়েছে যেখানে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন কীভাবে চা তৈরি করা হয় এবং তাজা দার্জিলিং চায়ের স্বাদ নিতে পারেন।
কালিম্পং
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কালিম্পং শহরে এলে আপনি প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবেন। এই জায়গায় গেলে আপনি প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন দেখতে পারবেন। এখানকার একের পর এক বৌদ্ধ মঠগুলি, হিন্দু মন্দিরগুলি, প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্ক্যাপ আপনার মন কেড়ে নেবে। কালিম্পং নিজেই তার অর্কিড নার্সারি সম্পর্কে গর্ব করে। এখানে পর্যটকরা ঘুরতেই আসেন অন্যতম আকর্ষণ অর্কিডের জন্য। এছাড়া শহরের ব্যস্ত বাজারগুলি জাতিগত হস্তশিল্প, তিব্বতি স্মৃতিচিহ্ন একটা আলাদাই অনুভূতি দেবে আপনাকে।
লাভা ও লোলেগাঁও
আপনিও যদি প্রকৃতিপ্রেমী এবং রোমাঞ্চ সন্ধানকারী হয়ে থাকেন তাহলে এই লাভা-লোলেগাঁও একদম আপনার জন্য আদর্শ ঠিকানা। এই লাভা এবং লোলেগাঁও যমজ শহর নেওরা ভ্যালি জাতীয় উদ্যানের গভীরে অবস্থিত। এখানকার ঘন পাইন জঙ্গলের পাশাপাশি বসন্তের সময়ে রডোডেনড্রন ফুলের জন্য পরিচিত। এদিকে, লোলেগাঁওয়ে উঁচু উঁচু গাছের মধ্য দিয়ে উঁকি দেওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের দুর্দান্ত দৃশ্য আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। লাভা পাখি পর্যবেক্ষক এবং ট্রেকারদের জন্য স্বর্গ। এখানকার কিছু জলপ্রপাতের, মাউন্টেন রেঞ্জ যে কাউকে পাগল করে দেবে। এখানে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেগুলি পর্যটনের ভাষায় ‘ভার্জিন’।
কার্শিয়াং
কার্শিয়াং…অর্কিড এবং হেরিটেজ রেলওয়ের ভূমি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৮৬৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কার্শিয়াং একটি মনোরম হিল স্টেশন। এই কার্শিয়াংকে আবার “সাদা অর্কিডের দেশ”-ও বলা হয়। শহরটি তার বিশাল চা বাগান, ঔপনিবেশিক ভবন এবং বিখ্যাত দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (টয় ট্রেন) এর জন্য ব্যাপকভাবে বিখ্যাত। এই রুটে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের বুক চিড়ে কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত মনোরম টয় ট্রেনের যাত্রা দেখতে পারবেন। এখানকার শীতল জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি মানুষকে আকৃষ্ট করে।
তিনচুলে ও তাকদাহ
তিনচুলে এবং তাকদহ এলে আপনি প্রকৃতির প্রেমে পরতে বাধ্য। এখানকার ছোট ছোট গ্রাম যা ঘন বনের মধ্যে অবস্থিত, হোমস্টেগুলি সকলকে আকৃষ্ট করে। হিমালয়ের গ্রামীণ জীবনের স্বাদ আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই জায়গাটি এক কথায় ইকো-ট্যুরিজম হাব হয়ে উঠেছে। পুরো শহরটি তিস্তা উপত্যকার পাশাপাশি কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের মনোরম দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেবে আপনাকে। প্রকৃতি প্রেমী এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য এই জায়গাটি এক কথায় স্বর্গ।