সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ পূর্ব রেলের অন্তর্গত এমন বহু স্টেশন রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে তেমন তথ্য নেই। এমন অনেক স্টেশন রয়েছে যেগুলি সুন্দর আবার এমন কিছু স্টেশন রয়েছে যেগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। আজকের এই প্রতিবেদনে তেমনই একটি রেলস্টেশন নিয়ে আলোচনা করব যেখানকার জনপদ একসময় বিরাট জমজমাট ছিল, কিন্তু এখন সেসব অতীত। জনপদের অবস্থা যেমন দুর্দশায় ভরা তেমনই খারাপ অবস্থা রেল স্টেশনেরও। আজ কথা হবে সূর্য্যপুর স্টেশন (Surjyapur railway station) নিয়ে।
সূর্য্যপুর স্টেশন
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ – লক্ষ্মীকান্তপুর শাখার একটি ছোট স্টেশন সূর্য্যপুর। যারা এই লাইনে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেন তাঁরা জানবেন শিয়ালদহ থেকে দূরত্ব মাত্র ৩৪ কিলোমিটার। বারুইপুরের পরে লক্ষীকান্তপুর শাখায় আরও তিনটে স্টেশন পার হলে চতুর্থ স্টেশন হচ্ছে সূর্য্যপুর। কলকাতা মহানগরীর খুব কাছে হলেও সূর্যপুর স্টেশনের নিকটাঞ্চল সবুজ প্রকৃতির কৌমার্য্য বজায় রেখেছে। স্টেশনে আছে বসার জায়গা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, সাবওয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেই দেখা মিলবে টিকিট কাউন্টার। স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে বড় রাস্তার ধারে হাট বসে। আসেপাশে খেত খামার ও স্টেশন এর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সূর্য্যপুর খাল।
সবকিছু থাকলেও এর অবস্থা শ্রীহীন। স্টেশনের মতোই এখানকার ঘর বাড়ি, দোকানপাটের চেহারা হতশ্রী চেহারা। দোকান-পাটগুলোর মধ্যেও যেন কেমন এক দারিদ্র্যের ছাপ।
অথচ সূর্য্যপুর এক সময় ছিল এক জমজমাট জায়গা। এই স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সূর্যসেনের নাম। তবে ইনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণকারী বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেন নন। তিনি হলেন বাংলার সেন রাজাদের এক জন বংশধর। যারা ইতিহাস পড়েছেন বা ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন, তাঁরা জানবেন বাংলার শেষ স্বাধীন বাঙালী রাজবংশ হল সেন বংশ।
নবদ্বীপে তুর্কি আক্রমণ
ঘোড়ার ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে এসে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজি অতর্কিতে লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী নবদ্বীপ আক্রমণ করেছিল (১২০৪ সন)। সেই সময় অশীতিপর রাজা লক্ষ্মণ সেন নৌকাযোগে পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান। এর ফলে বাংলার পশ্চিমাঞ্চলে সেন শাসনের অবসান হয়। কিন্তু সেন রাজাদের আর একটি রাজধানী ছিল পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে। সেখানে গিয়ে লক্ষ্মণ সেন আরও কিছু দিন রাজত্ব করতে থাকেন এবং ১২০৬ সনে মারা যান। তার অধস্তন কিছু বংশধর দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে অন্তত ১২২৫ সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন । তাদেরই একজন হলে সূর্য্যসেন।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুর-হাওড়া AC লোকালের দাবিতে চিঠি রেলমন্ত্রীর কাছে, আশ্বাস দিলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব
কালের গতিতে আদি গঙ্গা তার গতিপথ হারিয়েছে। সূর্য্যপুর ঘাট বলে একটা জায়গা এখনো আছে বটে কিন্তু নদী নেই। একটা দীঘি আছে, হয় তো সেটা পুরানো নদী খাতের অংশ। কোনও পুরানো মন্দির বা স্মৃতি সৌধ নেই। হয় তো মাটি, পুকুর খনন করলে অনেক কিছু বেড়িয়ে আসতে পারে। মনে করা হয়, সেই সূর্য্যসেনের নামেই এই রেলস্টেশনের নাম রাখা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |