দেবপ্রসাদ মুখার্জী: পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। পৃথিবীতে জীবকূলের বেঁচে থাকার নেপথ্যে চাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। সেই কারণে, মহাকাশ গবেষণার শুরু থেকেই চাঁদকে নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চালিয়েছেন দেশবিদেশের বিজ্ঞানীরা। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে অন্যান্য দেশের থেকে একধাপ এগিয়ে রয়েছেন। নেপথ্যে, ISRO-র চন্দ্রযান-৩ অভিযানের চূড়ান্ত সাফল্য।
এবার চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্যের ইতিহাসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ হলো। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তৈরি রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের পৃষ্ঠে একটি বিশাল গর্তের সন্ধান পেল। আমদাবাদের ফিজিকাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা ‘সায়েন্স ডিরেক্ট’-এর নয়া সংস্করণে এই আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই গর্ত থেকে চাঁদের সৃষ্টির ইতিহাস খুঁজে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
চমকপ্রদ তথ্য পাঠালো চন্দ্রযান-৩ এর রোভার
সম্প্রতি, চাঁদের বুকে অনুসন্ধান চালানোর সময় চন্দ্রযান-৩ মিশনের অত্যাধুনিক রোভার একটি ১৬০ কিমি চওড়া গর্তের সন্ধান পেয়েছে। এই বিশালাকার গর্তকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে সম্ভাবনা। জানা গিয়েছে, চাঁদের বুকে আবিষ্কৃত এই বিশালাকার গর্তটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আইটকেন অববাহিকা থেকে প্রায় ৩৫০ কিমি দূরে একটি উঁচু অঞ্চলে অবস্থান করছে।
ISRO-র রোভার খুঁজে পেল চাঁদের প্রাচীনতম গর্ত
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, এই দৈত্যাকার অন্ধকার গর্তটি চাঁদের অন্যতম পুরনো ভূতাত্ত্বিক কাঠামো হতে পারে। এই ধরণের নেপথ্যে রয়েছে আইটকেন অববাহিকার জন্ম। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে এই অববাহিকার বয়স প্রায় ৪২০ কোটি বছর। তবে নতুন আবিষ্কৃত গর্তটি তার থেকেও প্রাচীন বলে মনে করা হচ্ছে। যেহেতু এই গর্ত আইটকেন অববাহিকার আগেই তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাই এই গর্তের বয়স ৪২০ কোটি বছরেরও বেশি হতে পারে।
চাঁদের ভূতাত্বিক ইতিহাসের নিদর্শন এই গর্ত
গত বছরের ২৩ অগস্ট চাঁদে অবতরণের পর থেকে রোভার একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠায়। নিজের অপটিকাল ক্যামেরার মাধ্যমে রোভার ওই গর্তের হাই-রেজোলিউশন ছবি তুলে পাঠায়, যা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই গর্তটি চাঁদের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। চাঁদের মাটিতে পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা এই গর্তের ওপর ধ্বংসস্তূপের স্তর তৈরি করেছিল।
গর্ত থেকেই চাঁদের রহস্য উন্মোচিত হবে
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রাচীন গর্তের আবিষ্কার চাঁদের প্রাথমিক ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচন করবে। একইসঙ্গে এই আবিষ্কার চাঁদের প্রথমদিককার ভূতাত্ত্বিক গঠন নিয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।পাশাপাশি, রোভারের এই তথ্য চাঁদের মাটির গঠন এবং প্রাচীন কালের মহাজাগতিক ঘটনাবলী নিয়ে গবেষণায় সাহায্য করবে।