শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ Exclusive: ভারতীয় রেলের (India) ইতিহাস আপনার ধারণার থেকেও দীর্ঘ। সারাজীবন লেগে গেলেও হয়তো আপনি এর ইয়ত্তা পাবেন না। এমনিতে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে ভারতীয়দের মধ্যে রেল পরিষেবা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। কারণ বর্তমান সময়ে দেশের সিংহভাগ মানুষই ট্রেনে করে রোজ নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছেন। ফলে কৌতূহল হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের এমন একটি রেল পরিষেবা নিয়ে তৎজ্য দেওয়া হবে যেটি সম্পর্কে শুনলে হয়তো আপনিও আকাশ থেকে পড়বেন। আজ কথা হবে হাওড়া-আমতা রুটে মার্টিন রেল পরিষেবা নিয়ে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
মার্টিন রেল পরিষেবা
এখন আপনিও নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এই মার্টিন রেল পরিষেবা কী? কীভাবে হাওড়ার বুক চিড়ে এটি ছুটে বেরাত? জানতে হলে চোখ রাখুন আজকের এই প্রতিবেদনটির ওপর। এই ট্রেন কীভাবে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিল সেটা শুনলে হয়তো চমকে উঠবেন আপনিও। মার্টিন ট্রেনের গল্প জেনে নিন। জানা যায়, ১৮৯২ সালে মার্টিন কোম্পানির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় মার্টিন ট্রেন। তার ছয় বছর পর অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে এই ট্রেনের শুভ উদ্বোধন হয়। হাওড়া থেকে আমতা পর্যন্ত শুরু হয়ে যায় মার্টিন ট্রেনের ঐতিহাসিক সফর। ছোটো লাইনের এই ট্রেন-ই তখন হয়ে ওঠে আমতা সহ বিস্তির্ণ এলাকার মানুষের পরিবহনের একমাত্র সহায়। আজকের মতো বাস, ট্রেকার, অটো, টোটো কিছুই তখন ছিল না। কয়লা ইঞ্জিন চালিত ছিল এই ট্রেন। ছোট্ট ইঞ্জিন সহ সাত আটটা ছোটো ছোটো কামরা নিয়ে দুলকি চালে রওনা দিত মার্টিন ট্রেন।
হাওড়াবাসীর কাছে পছন্দের ছিল এই ট্রেন
হাওড়া-হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের মনে এক আলাদাই জায়গা করে নিয়েছিল এই ট্রেন। হাওড়া ময়দান থেকে আমতার মধ্যে ছোটো লাইনের পরিচিত মার্টিন রেল শুধু আমতা নয়, আপামর হাওড়াবাসীর কাছে এই ট্রেন ছিল আপনজনের মতো। কারও বাড়ির উঠোন, কারওর বাগানের ভিতর দিয়ে ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে যেত সেই রেলগাড়ি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। যদিও এই বিষয়ের সত্যতা যাচাই করেনি indiahood.in.
যাত্রাপথে এই স্টেশনগুলিতে দাঁড়াত এই ট্রেন
একবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ষ্টেশন থামত এই ট্রেন। লোকমুখে জানা গিয়েছে, এই ট্রেনটি যাত্রাপথে হাওড়া ময়দান, দাশনগর, বালটিকুরী, বাঁকড়া, সলপ, কাটলিয়া, মাকড়দহ, ডোমজুড়, দক্ষিণবাড়ি, বড়্গাছিয়া, পাতিহাল, মুন্সিরহাট, মাজু, দক্ষিণ মাজু, জালালসী, পানপুর, হরিশদাদপুর ও আমতায় দাঁড়াত। অবাক করার মত বিষয় হলো প্রতিটি স্টেশন ছিল প্লাটফর্মবিহীন। একটানা প্রায় ৭২ বছর চলার পর ১৯৭০ সাল নাগাদ এই ট্রেন চলাচল চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। আসলে লোকসানের মুখে পড়ে এক সময়ে এই ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।