সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ শিক্ষককে সমাজ গড়ার কারিগর বলা হয়। এই শিক্ষকের ছায়া বেড়ে ওঠে হাজার হাজার কোটি কোটি পড়ুয়া। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের এমন এক শিক্ষক সম্পর্কে তথ্য দেব যিনি কিনা শুধুমাত্র নিজের দেশের ছেলেমেয়েদের পড়াবেন বলে বিদেশের মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়েছেন। তবে আজ তাঁর গবেষণা রীতিমতো আন্তুর্জাতিক স্বীকৃতি পেল। আজ কথা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুরের ঝেঁতলা শশীভূষণ হাইস্কুলের রসায়নের শিক্ষক সুদীপ চক্রবর্তীকে (Sudip Chakraborty) নিয়ে।
বিদেশের চাকরির প্রস্তাব ফেরানো IIT পাশ শিক্ষকের গবেষণায় শোরগোল
সুদীপ চক্রবর্তী একজন প্রতিভাবান শিক্ষক। শুধুমাত্র নিজের দেশের তথা বাংলার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শেখাবেন বলে পিএইচডি করেও দেশ বিদেশের চাকরি ছেড়েছেন। তবে এই নিয়ে তাঁর কিন্তু কোনও অনুতাপ নেই। বরং এই কাজ করে তিনি যথেষ্ট খুশি। জানা গিয়েছে, স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি, তিনি রসায়নের একজন গবেষকও বটে।
২০১১ সালে আইআইটি খড়গপুর থেকে পিএইচডি করেছেন গবেষক সুদীপ চক্রবর্তী। সেইসময়ে তিনি দেশ এবং তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে চাকরির সুযোগ অবধি পান। কিন্তু সেসবকে তিনি না করে দেন। কেন এরকম অফার থাকা সত্ত্বেও কেশপুরের ঝেঁতলা শশীভূষণ হাইস্কুলের পড়ুয়াদের পড়াশোনার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন তিনি? এই বিষয়ে সুদীপবাবু জানান, “১৯ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি ৷ তার সঙ্গে পিএইচডি করেছি ৷ আমি ২০১১ সালে আইআইটি খড়গপুর থেকে পিএইচডি-র ডিগ্রি পাই ৷ সেই সময় চাইলেই রাজ্যে ও দেশের যে কোনও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অধ্যাপনা করতে পারতাম ৷ তাও খুব সহজে ৷ এমনকি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার কাছে পোস্ট-ডক্টরেটের সুযোগ আসে ৷ তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া থেকে আমার কাছে প্রস্তাব এসেছিল ৷”
কী বলছেন শিক্ষক?
তিনি আরও বলেন, “আমি এই পশ্চিমবঙ্গেই থেকে যাই। যদি আমার কিছু দেওয়ার থাকে, তা যেন এখানকার ছেলেমেয়েরাই পায় ৷ বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ তৈরি করা ৷ তাদের কেরিয়ার গাইডেন্স ৷ কারণ, সব ছেলেমেয়ের মেধা তো এক হয় না ৷ কেউ খুব ভালো হয়, কেউ আবার স্বল্প মেধার হয় ৷ তারাও যাতে কেরিয়ার গড়তে পারে, তার জন্য পরামর্শ দেওয়া, বই লেখা, গবেষণা করা এই নিয়েই কাটিয়ে যাচ্ছি।” সুদীপ চক্রবর্তী ইতিমধ্যে বহু বই লিখে ফেলেছেন। এমনকি তাঁর সাম্প্রতিক সময়ে করা এক গবেষণা গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে।
তাঁর গবেষণাপত্রের বিষয় হল, ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেন্সিং-ন্যানো পার্টিক্যাল মডিফায়েড ইলেক্ট্রোড অফ ইথানল ৷ যে গবেষণাপত্রটি এবছর ৩১ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে ৷ সফল এই গবেষণার জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক এই সায়েন্স জার্নালের তরফে ৷ গবেষক সুদীপ চক্রবর্তীর মতে, এই গবেষণার বিষয় ও উদ্দেশ্য হল- মানব দেহে রক্তে মিশে থাকা অতি সামান্য পরিমাণ ইথানল বা অ্যালকোহলের মাত্রাকে পরিমাপ করা ৷ এর সাহায্যে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেন্সিং পদ্ধতিতে ইথানল বা অ্যালকোহলের ন্যানো পার্টিক্যালকে চিহ্নিত করা যাবে ৷ যা সাধারণ কার্বন টেস্টিং পদ্ধতিতে সম্ভব হয় না ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি জানিয়েছেন, যেকোনও কার্বন ডিভাইসে এই ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেন্সিং পদ্ধতিতে ইথানল চিহ্নিত করা যাবে ৷ এক্ষেত্রে কেবল রাসায়নিক পরীক্ষার পদ্ধতিতে মডিফিকেশন করা হয়েছে ৷ সহজে অতিসামান্য পরিমাণে থাকা ইথানলকে কীভবে চিহ্নিত করা যাবে, তার বিস্তারিত গবেষণা তুলে ধরেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ তৈরি হবে তাজপুর-রঘুনাথপুর আর্থিক করিডোর, ২০০ একর জমি দিচ্ছে রাজ্য সরকার
গবেষক বলেন, “আমি যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতাম, তাহলে আমার এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব পাওয়া অনেক সহজ হতো ৷ কিন্তু, একজন স্কুলের শিক্ষক হিসেবে এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব পেতে, আমাকে প্রমাণ দিতে হয়েছে ৷ আমার গবেষণাগুলির জন্য অনেক বেশি কোয়্যারি বা অনুসন্ধান হয় ৷ আমাকে সেগুলি পূরণ করতে হয় ঠিকঠাকভাবে ৷ তারপর গিয়ে আমার গবেষণাকে মান্যতা দেওয়া হয় ৷ ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেন্সিং-ন্যানো পার্টিক্যাল মডিফায়েড ইলেক্ট্রোড অফ ইথানলের জন্য আমাকে ১০টি কোয়্যারি পূরণ করতে হয়েছে ৷”