কালিম্পংয়ে পাহাড়ে ভগ্নপ্রায় শতাব্দী প্রাচীন দুর্গ, সংরক্ষণ করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার

Published on:

lepcha fort kalimpong

শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ আগামী দিনে কি আপনিও উত্তরবঙ্গ (North Bengal) ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আপনার জন্য রইল এক দুর্দান্ত সুখবর। পাহাড় ভালবাসেন না এমন মানুষকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বছরের যে কোনও সময় হোক না কেন সে শীত হোক গ্রীষ্ম হোক কিংবা বর্ষা, মানুষ সুযোগ পেলেই ট্রেনের টিকিট কেটে উত্তরবঙ্গে ঘুরতে চলে যান। তবে এবার উত্তরবঙ্গে ঘুরতে গেলে আপনার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। কারণ এবার অবশেষে তৈরি হতে চলেছে লেপচা ফোর্ট। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। কালিম্পং-এর বুকে তৈরি হতে চলেছে লেপচা দুর্গ।

কালিম্পংয়ে লেপচা দুর্গ | Lepcha Fort Kalimpong |

WhatsApp Community Join Now

এই দুর্গ তৈরির কাছে সম্প্রতি গতি এসেছে বলে জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন (WBHC) কালিম্পং পাহাড়ের লেপচা রাজবংশের অবশিষ্টাংশ ডালিম লেপচা দুর্গের পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করবে বলে খবর। ডব্লিউবিএইচসি-র তরফে ইতিমধ্যেই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আর এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কমিশন দুর্গটি সংরক্ষণ এবং সাইটে প্রয়োজনীয় পুনরুদ্ধারের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন প্রধানত ডালিম লেপচা দুর্গ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে সম্মত হয়, যার ফলস্বরূপ প্রকল্প কমিটির সদস্যদের তররে পরিদর্শন করা হবে এবং তারপরে বিস্তারিত একটা রিপোর্টে জমা দেওয়া হবে।” ডব্লিউবিএইচসির সচিব ৩০ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ মায়েল লিয়াং লেপচা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাতে এমনটাই বলা হয়েছে।

লেপচা দুর্গের ইতিহাস

স্থানীয়দের মতে, শেষ লেপচা রাজা, পানো গায়েবু আচিওক, যাকে পাহাড়ের অন্যতম শক্তিশালী রাজা হিসাবে বিবেচনা করা হত, তিনি ১৮০০ শতকে দুর্গটি তৈরি করেছিলেন। ভুটানের সেনাবাহিনী বেশ কয়েকবার এই অঞ্চল আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু রাজা সর্বদা এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। এদিকে নিকটবর্তী দামসাং দুর্গে ভুটানিদের এরকম একটি আক্রমণের সময়, গায়েবু আচিওক ডালিম লেপচা দুর্গে নাকি আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর ভুটানের রাজা তখন শান্তি চুক্তি করার জন্য লেপচা রাজার কাছে একজন দূত প্রেরণ করেছিলেন। ডালিম কেল্লায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ভুটানের রাজা গায়েবু আচিওককে প্রচুর মদ পান করান। রাজা আচিওক নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে ভুটানের রাজা তার শিরশ্ছেদ করেন এবং তার মাথা নিকটবর্তী চেল নদীতে ফেলে দেন। সেই থেকে চেল নদী “ভুটায়দাহ” নামে পরিচিত। দুর্গটি তখন ভুটানিদের দখলে ছিল এবং ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত এটি তাদের দখলে ছিল। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অঞ্চলটি দখল করে নেয়। যাইহোক, ২০১৮ সালে, ডব্লিউবিএইচসি দুর্গটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষণা করেছে।

বোর্ড গঠন

লেপচা সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের জন্য ২০১২ সালে বোর্ড গঠন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কালিম্পংয়ের বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান। সূত্রের খবর, বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এল এস তামসাং দুর্গ সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে দুর্গটি কোথায় অবস্থিত? জানিয়ে রাখি, দুর্গটি কালিম্পং জেলার গরুবাথান ব্লকে ৩২২ মিটার উচ্চতায় এবং কালিম্পং শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাখি বিশেষজ্ঞ, পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্যটকদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় স্থান।

এদিকে সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়েছে জিটিএ-ও। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেছেন, ‘কালিম্পং পাহাড়ের লেপচা প্রবাসীদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে পশ্চিম বিএইচসির সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দুর্গটি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের উদ্যোগটি ঐতিহাসিক কাঠামোর এক ঝলক দেখার জন্য বিশ্বজুড়ে বসবাসকারী লেপচা সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোককে আকর্ষণ করবে। এটি জেলায় পর্যটনের একটি নতুন পথও খুলবে।’

সঙ্গে থাকুন ➥
X