শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ জাঁকিয়ে শীতের দাপট চলছে বাংলায়। আর এই শীতের সময়ে মিঠে রোদ গায়ে মেখে এবং ব্যাগ গুছিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। আর সেটা যদি, পাহাড়, জঙ্গল, নদীতে ঘেরা জায়গায় হয় তাহলে তো একদম সোনায় সোহাগা ব্যাপার। বর্তমান সময়ে সকলেই ব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছে। ফলে এক দু’দিনের ছুটি হাতে পেলেই মনটা কেমন যেন পালাই পালাই করে সকলের। কিন্তু ডেস্টিনেশনের অভাব। আপনিও কি ভালো জায়গা বিশেষ করে অফবিট জায়গা খুঁজছেন ঘুরতে যাওয়ার জন্য? তাহলে এই শীতে আপনারও ঠিকানা হোক ‘মামুডি’। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
শীতে ঘুরে আসুন ‘মামুডি’
যারা পাহাড়, নদী, ঝর্না, জঙ্গল একসঙ্গে দেখতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে এই মামুডি এক কথায় প্যারাডাইস। এখানকার ল্যান্ডস্কেপ, পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে আপনার মন ও শরীর দুটোই জুড়িয়ে দেবে। এখানে গেলে আপনি বাড়ি ফিরে যেতে চাইবেন না গ্যারেন্টি। এখানকার সবথেকে বড় ইউএসপি হল বনজঙ্গল। যেখানে আপনি সবকিছুর সমাহার দেখতে পাবেন।
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে জায়গাটি ঠিক কোথায়? তাহলে জানিয়ে রাখি, এর জন্য আপনাকে বেশি দূরে যেতে হবে না, আপনার আমার সবার প্ৰিয় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় গেলেই হবে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এই মামুডি, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে এক প্রাচীন আদিবাসী জনপদ। এটি মূলত কোটশিলা বনাঞ্চলের অন্তর্গত পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু জায়গার মধ্যে একটি। এখানকার ঘন জঙ্গল, তার মাঝে থাকা নদী ঝর্ণা, হ্রদ ও পাহাড় বেষ্টিত মামুডি একাধারে ময়ুর, হরিণ, হাতি, সজারু, খরগোশ প্রভৃতি বন্যপ্রানীদের নিশ্চিন্ত আবাসস্থল।
আপনি যদি গাছপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। কারণে এখানে এলে আপনি শাল, পিয়াল, মহুয়া, ভালা, সেগুন, হরিতকী, কেন্দু প্রভৃতি চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী বৃক্ষ দেখার সৌভাগ্য লাভ করবেন। পাহাড়ি টিলার উপরে গড়ে উঠেছে ছবির মতো সুন্দর কিছু রিসোর্ট দেখতে পাবেন যেখানে অনায়াসেই আপনি রাত্রিবাস করতে পারবেন। এখানে এলে অন্তত আপনার জীবনে অ্যাডভেঞ্চারের অভাব হবে না। যারা পুরুলিয়া বেড়াতে গিয়ে নিস্তব্ধ ও নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চান, তাদের জন্য মামুডি একদম আদৰ্শ জায়গা।
কিভাবে যাবেন?
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে কীভাবে এই মামুডি পৌঁছাবেন? তাহলে জানিয়েছি রাখি, হাওড়া থেকে রাঁচি ক্রিয়া যোগা এক্সপ্রেস বা শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরে মূরী জংশন, হাওড়া রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ধরে ঝালিদা স্টেশন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ধরে কোটশিলা বা পুরুলিয়া স্টেশন কিংবা চক্রধরপুর এক্সপ্রেস ধরে পুরুলিয়া স্টেশন নামতে পারেন। সেখান থেকে একটা গাড়ি করে পুরুলিয়া শহর ভেদ করে প্রথমে অযোধ্যা হিল টপ, ওখান থেকে পাহাড়ের ওপর দিয়েই পৌঁছে যান মামুডি।
কী কী দেখবেন
পুরো ঝালদা সার্কিট (অফবিট) এবং অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত স্পট এখান থেকে কভার করা যায়। এছাড়াও মাছকান্দা ঝর্ণা, পিটিদিরি ঝর্ণা, সাহারজোড় নদী, মড়াভাসা লেক (পাঁড়রি), গজাবুরু ভিউ পয়েন্ট, জিলিং সেরেং পাহাড়িয়া গ্রাম, চেমটোবুরু শৃঙ্গ, মামুডির জঙ্গল, রুপাই নদী, গজাবুরু শৃঙ্গ ইত্যাদি জায়গা ঘুরে আসতে পারেন।