সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ বাঙালি পারে না এমন কাজ হয়তো নেই। আর সেই কথাটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি কিনা কলকাতার রাস্তায় এক সময়ে ট্যাক্সি চালক ছিলেন। কিন্তু এখন সে বিখ্যাত একটি আইসক্রিম ব্র্যান্ডের মালিক। আজ সেই ব্যক্তিই দেশের সাতটি রাজ্যে এবং ২৫টি শহরে এমন একটি আইসক্রিমের ব্র্যান্ড রয়েছে যার মালিক তিনি। আজ কথা হচ্ছে টার্কিশিয়ানো আইসক্রিম ও তাঁর মালিককে নিয়ে। কে এই বিখ্যাত আইসক্রিম কোম্পানির মালিক? জানতে চোখ রাখুন আজকের এই প্রতিবেদনটির ওপর।
আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আট থেকে আশি, সকলেরই পছন্দের জিনিস হল আইসক্রিম। এখন অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে টার্কিশিয়ানো আইসক্রিম। টার্কিশ আইসক্রিম মানেই হল এক মজার ব্যাপার। বাস্তব জীবনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, আইসক্রিম পরিবেশক বেশ কায়দা করে টার্কিশ আইসক্রিম গ্রাহককে দিচ্ছেন। রীতিমতো ছিনিয়ে নেন গ্রাহকরা। সে যেন এক অদ্ভুত মজার খেলা। এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হননি বাংলার মানুষও। কিন্তু এই মজার স্বাদ প্রথম কোন মানুষ দিয়েছিলেন জানেন? সেই ব্যক্তির নাম হল দেবেন্দ্র গুপ্ত।
সকলকে অবাক করবে দেবেন্দ্র গুপ্তর গল্প
বাংলার মানুষকে টার্কিশ আইসক্রিমের স্বাদ এই দেবেন্দ্র গুপ্তই কিন্তু দিয়েছিলেন। শুনে অবাক লাগছে তো? যে একজন ট্যাক্সি চালকের হাত ধরে এত বড় একটি জিনিসের স্বাদ পেয়েছেন আপনারা। জানা গিয়েছে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। পড়াশোনার প্রতি কোনওদিনও তেমন মনোযোগ ছিল না তাঁর। বাবার মতো একজন পাকা ব্যবসায়ী হবেন সেটাই ছিল লক্ষ্য। দেবেন্দ্র-র বাবা বিশ্বনাথ গুপ্তের ইলেকট্রিকস গুডের ট্রেডিং এবং ম্যানুফ্যাকচারের ব্যবসা ছিল বলে খবর। দিল্লি গিয়ে নাকি বাবার ব্যবসার জন্যই প্রোডাক্ট পাঠাতেন দেবেন্দ্র। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজের খরচা চালানো কিন্তু মোটেই মুখের কথা ছিল না।
তবে একটা সময়ে জন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে দেবেন্দ্র কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ভেতর থেকে সেই ব্যবসা করার পোকাটা কিন্তু তখনও মরেনি দেবেন্দ্র-র। একটা সময়ে গিয়ে বাবার ব্যবসা রীতিমতো তলানিতে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু তারপরেও হার না মেনে একদিকে হেপাটাইটিস বি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং থেকে পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন দেবেন্দ্র। এদিকে সংসারের হাল ধরতে বিরিয়ানি রান্না করে বেহালার ১৪ নম্বরে একটি ফুড কার্ট অবধি চালিয়েছিলেন দেবেন্দ্র।
বিক্রি করেছেন বিরিয়ানিও, কিন্তু…
২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল, বছর দুয়েক ব্যবসা চালানোর পর এক আত্মীয়কে সেই বিরিয়ানি ব্যবসার দায়িত্ব দিয়ে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ক্যাব চালানো। তখন সবে সবে কলকাতায় ক্যাব জিনিসটির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলেন। সেই সময়ে দিনে ক্যাব চালিয়ে এক থেকে দুই হাজার টাকা অবধি রোজগার করে ফেলতেন দেবেন্দ্র। এরপর একদিন লেক গার্ডেন্স চত্ত্বরের এক রেগুলার কাস্টমার দেবেন্দ্রকে কলকাতার একটি বিখ্যাত আইসক্রিমের দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে খাইয়েছিলেন। জানলে অবাক হবেন, সেইদিন বিল উঠেছিল ১৫০০ টাকা। দেবেন্দ্র ভাবতে শুরু করেন, এই আইসক্রিমের মধ্যে কী এমন ছিল যেটার জন্য এত দাম। কে ভাবতে পেরেছিল, সেই দিনটাই দেবেন্দ্র-র জীবনের মোড় এভাবে ঘুরিয়ে দেবে?
ক্যাব চালানোর পাশাপাশি কোম্পানির থেকে পাওয়া ফোনের মাধ্যমে আইসক্রিম নিয়ে রিসার্চ করতে থাকে দেবেন্দ্র। রোজ ভাবতেন কীভাবে থাইল্যান্ডের আইসক্রিমের স্বাদ তিনি বাংলার মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেবেন। এরপর নিজের কিছু জমানো টাকা দিয়েই দিল্লি থেকে আইসক্রিম বানানোর মেশিন কিনে শুরু করলেন আইসক্রিম তৈরি করা। এরপর শুরু হল দেবেন্দ্র-র আইসক্রিম ব্র্যান্ড কিস ও ক্রিমের পথচলা। কিন্তু বাজারে ইতিমধ্যে থাকা নামী দামী আইসক্রিম ব্র্যান্ডকে টেক্কা দেওয়া তখন সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু এত সহজে হার না মেনে ভাবতে থাকেন নতুন কিছু করার। এরপর এল ২০১৮-১৯ সাল। সেই সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় অভিনেতা আমির খানের একটি ভিডিও। এরপর সে শুরু করে টার্কিশ আইসক্রিম নিয়ে রিসার্চ করা। এই নিয়ে ব্যবসাও শুরু করেছিল দেবেন্দ্র। একটু একটু করে সাফল্যে মুখ অবধি দেখছিল তাঁর ব্যবসা। কিন্তু ২০২০ সাল অর্থাৎ কোভিড এসে সবটা ছারখার করে দিল তাঁর স্বপ্ন। ব্যবসা প্রায় ডুবতে বসেছিল। কিন্তু হাল ছাড়েননি দেবেন্দ্র। কিছু মানুষের সাহায্য এবং জোম্যাটর কিছু কোভিড পলিসি তাঁর জীবনের মোড় নতুন করে ঘুরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ একদিনে অনেকটাই দরপতন সোনার, রুপোও বিকোচ্ছে জলের দরে! আজকের রেট
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দেবেন্দ্রকে। ধীরে ধীরে পরিচিতি পেতে থাকে টার্কিশিয়ানো। আজ গোটা ভারতে টার্কিশিয়ানোর আইসক্রিমের আউটলেট রয়েছে। বাংলার পাশাপাশি দিল্লি, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, কর্ণাটক সহ সব জায়গায় রয়েছে তাঁর দোকান। শুধু তাই নয়, আজ কলকাতার বুকে দেবেন্দ্র ঝাঁ চকচকে ৪৫ আসনের একটি আরবিক রেস্তোরাঁ অবধি খুলেছেন তিনি। সেই রেস্তোরাঁর নাম হল Arabiyano ।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |