ভারত তথা এশিয়ার প্রথম ডিজেল রেল ইঞ্জিন চালক, এখন চালান EMU! সংঘর্ষে ভরা জীবন মমতাজের

Published on:

প্রাচীন ভারতের অনেক মহিয়সী নারীর গল্প আমরা ইতিহাসে পড়েছি। গার্গী, অপালা, লোপামুদ্রার মতো মহিলারা আমাদের দেশের মহিলাদের শিক্ষা সংস্কৃতির স্থানকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর সেই ধারা বজায় রেখে এখনও অনেক মহিলা লড়াই করে নিজেদের সাফল্য নিজেরাই ছিনিয়ে নিয়েছেন। মমতাজ এম কাজী হলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় রেলওয়ের মুম্বই ডিভিশনের একমাত্র মোটর-ওম্যান হিসেবে তিনি কাজ করছেন বিগত ২০ বছর ধরে। যে ডিভিশনে ৭০০-র বেশি পুরুষ মোটর-ম্যান হিসেবে কাজ করছেন, সেই পদে মমতাজ হলেন একমাত্র মহিলা কর্মী।

গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন Join Now

১৯৯৫ সালে, মমতাজ এম কাজীর নাম লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে ওঠে। তাঁর জীবনের লড়াইকে স্বীকৃতি জানিয়ে এই ভিনদেশী সংস্থা তাঁকে সম্মানিত করে বিশেষ পুরস্কারে। এছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকেও বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন মমতাজ। রেলওয়েতে তাঁর অনস্বীকার্য অবদান এবং মহিলা হিসেবে কাজের প্রতি তাঁর দক্ষতার কারণেই আজ তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে খবর তৈরি হচ্ছে। তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক যে কিভাবে লড়াই করে মমতাজ তাঁর যোগ্য স্থান দখল করেছেন।

পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে রেলের চাকরি

মমতাজ কাজী ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে ভারতের প্রথম মহিলা হিসেবে ডিজেল ইঞ্জিন ট্রেনের চালক হয়েছিলেন। মমতাজ ২৬ বছর ধরে মুম্বাইয়ের ট্র্যাকে ট্রেন চালাচ্ছেন। মুম্বাই সেন্ট্রাল রেলওয়েতে প্রায় ৭০০ জন মোটরম্যান রয়েছে, যার মধ্যে তিনিই একমাত্র মহিলা মোটরওম্যান। তাঁর বাবা ছিলেন রেলওয়ের সিনিয়র অফিসার। তবে ডিজেল ইঞ্জিন চালক হওয়া মুমতাজের পক্ষে সহজ ছিল না। তিনি কারণ মুসলিম পরিবারের সদস্য। ১৯৮৯ সালে যখন তিনি রেলওয়ের চাকরির জন্য আবেদন করেন, তখন তার বাবা আল্লারখু ইসমাইল কাথাবালা তাতে সম্মতি দেন নি। কিন্তু শেষমেষ মেয়ের অদম্য জেদের সামনে বাবাকে হার মানতে হয়। এরপর মমতাজ তাঁর পছন্দের চাকরিতে যোগদান করেন।

বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে Join Now

ঘর পরিবার সামলে চাকরি করেন মমতাজ

সময়ের সঙ্গে বিয়ে হয় মমতাজের। মকসুদ কাজী হলেন তাঁর স্বামী। মমতাজ ও মাকসুদের দুই সন্তান হয়। এখন তাঁদের ছেলে তৌসিফের বয়স ১৪ বছর এবং তাঁদের মেয়ে ফাতিনের বয়স ১১ বছর। তবে মমতাজ বাড়িতে না থাকলে বাচ্চাদের দেখভাল করেন তাঁর স্বামী মাকসুদ। মমতাজের সাথে বিয়ের সময় তিনি মমতাজের ট্রেন চালকের চাকরিতে সম্মতি দেননি। কিন্তু মমতাজের যোগ্যতা দেখে তিনি আনন্দের সাথে তাঁকে এবং তাঁর চাকরিকে মেনে নেন। বাচ্চাদের জন্য খাবার তৈরি করে মমতাজ ডিউটির জন্য সকাল ৬টায় ঘর থেকে বের হন। তারপর সারাদিন দায়িত্বের সঙ্গে নিজের কাজ করেন এই মহিলা।

বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন মমতাজ

মমতাজ কাজীর নাম লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ‘প্রথম মহিলা ডিজেল মোটরম্যান’ হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে। তবে তার দক্ষতার গল্প শুধুমাত্র লিমকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনিই প্রথম চালক যিনি ডিজেল এবং বৈদ্যুতিক উভয় ইঞ্জিন চালাতে জানেন। মমতাজ গত কয়েক বছর ধরে ইলেকট্রিক মোটরওম্যান হিসেবেও কাজ করছেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে, মমতাজ এম কাজী রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যাযয়ের হাত থেকে ‘নারী শক্তি পুরস্কার’-এ সম্মানিত হন।

বাস্তব জীবনেও চূড়ান্ত সফল মমতাজ কাজী

মমতাজ শুধু চাকরিতেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও চূড়ান্ত সফল এলজন মহিলা। কারণ মোটরওম্যান হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন মা ও স্ত্রী হওয়ার দায়িত্বও খুব ভালোভাবে পালন করছেন। মমতাজের সাহায্যেই তার দুই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে। এখন তাঁরা দুজনেই বিদেশে কাজ করছে। তাই একথা বলাই যায় যে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥
X
Join Group