পার্থ সারথি মান্না, কলকাতাঃ প্রতিদিন নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের একমাত্র ভরসা হল লোকাল ট্রেন। গোটা দেশের প্রায় ৭০০০ এরও বেশি স্টেশন রয়েছে, এর মধ্যে কিছু অত্যন্ত ব্যস্ত তো কিছু একেবারেই নির্জন। এই সমস্ত স্টেইনের নামকরণ থেকে তৈরি হওয়ার সাথে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক কাহিনী যা আজও অনেকেরই অজানা। আজ এমনই একটি স্টেশন ‘মানকুণ্ডু’ সম্পর্কে জানাবো আপনাদের।
মানকুণ্ডু স্টেশনের ইতিহাস
হাওড়া মেন লাইনের একটি স্টেশন মানকুণ্ডু (Mankundu)। ১৮৫৪ সালের ১৫ই অগাস্ট যখন প্রথম হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা চালু হয় তখন কিন্তু অস্তিত্বই ছিল না মানকুণ্ডু স্টেশনের। সেই সময় ভদ্রেশ্বরের পরেই আসত চন্দননগর। তাহলে কি করে তৈরি হল স্টেশন? আজ কে সেই কাহিনীই রইল আপনাদের জন্য।
এক ব্যবসায়ীর জেদেই শুরু স্টেশন তৈরির কাজ
রেল লাইন তৈরি হওয়ার বেশ কিছু আগেই সেই এলাকার কয়েক বিঘা জমি কিনে বিশাল প্রাসাদসম বাড়ি, বাগান থেকে শুরু করে জলাশয় বানিয়েছিলেন সেসময়ের বিখ্যাত ব্যবসায়ী গৌর খাঁ। নিয়েজের শখ নিয়ে বেশি সৌখিন ছিলেন গৌরবাবু। কাজের জন্য তাকে প্রায়শই কলকাতায় যেতে হত, এর জন্য ব্যবহার হত জুরিগাড়ি। পরবর্তীতে ট্রেন চালু হলে ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর বগিতেই সফর করতেন। কিন্তু ট্রেন ধরতে চন্দননগর বা ভদ্রেশ্বর কোথাও যেতে রাজি নন তিনি। উঠতে হলে মানকুণ্ডু থেকেই উঠবেন। তাই সময় মত লোক পাঠানো হতে চন্দননগর স্টেশনে। সেই কর্মচারী মানকুণ্ডু আসার সময় চেন টেনে ট্রেন থামাতো আর গৌর খাঁ ট্রেনে উঠতেন।
ফাইনের জেরে নজরে আসে মানকুণ্ডু
প্রতিবার চেন টেনে ট্রেনে ওঠা নামার কারণে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হত গৌর খাঁকে। যেটা অডিটের সময় রেলের কর্তাদের নজরে আসে। এরপর সবটা খতিয়ে দেখে স্টেশন তৈরির অনুমতি মেলে। জানলে অবাক হবেন গৌর খাঁয়ের দেওয়া জমিতেই বানানো হয় স্টেশন। এমনকি সেটা তৈরির সময় অন্যান্য কাজেও অনেক সাহায্য করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ এক ছাতার তলায় সব পরিষেবা, সুপার APP ‘SwaRail’ আনল রেল! কী কী সুবিধা পাবেন?
শোনা যায়, রেল লাইন পেরোনোর জন্য গোলাপোল থাকলেও মেয়ের জামাইকে বাড়ি আনার জন্য মাথা নিচু করতে দিতে চাননি গৌর বাবু। তাই রেলকে চিঠি দিয়ে সন্ধ্যে থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত রেল লাইন খুলে দেওয়া হয়েছিল, এর জন্য বিরাট অঙ্কের টাকাও দেওয়া হয়েছিল।
তবে নিজের শখ আর বিলাসিতার জেরে একসময় প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে পরিবারের বাকিরা বেশি খরচ করার আগেই বলা হল, ‘সাবধানে খরচ করিস, না হলে খাঁ হয়ে যাবি।’ এভাবেই তৈরি হয়েছিল মানকুন্ডু স্টেশন। সেই কারণেই স্টেশনের পাশে বিশাল প্রাসাদ সমান গৌর খাঁয়ের বাড়িটি দেখতে পান। যদিও এর পিছনের ইতিহাস অনেকের কাছেই অজানা।
অভিষেকেই ৩ উইকেট, ম্যাচ শেষে হর্ষিত রানা বললেন ‘ওদের কথায় আমার কিছু যায় আসে না’