পাহাড়, নদী ও টোটোদের রহস্যময় গ্রাম! একবার গেলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন

Published on:

totopara

শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ খাতায় কলমে বাংলায় এখন শীতের মরসুম। আর শীতের মরসুমে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আনন্দই কিন্তু আলাদা। এই সময়ে আপনিও যদি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনটি রইল শুধুমাত্র আপনার জন্য। বিশেষ করে আপনিও যদি অফবিট জায়গা খুঁজছেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একটা দুর্দান্ত ঘুরতে যাওয়ার জায়গার সন্ধান পাবেন। আজ কথা হচ্ছে ভারত-ভুটান সীমান্ত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির কোলে পাহাড় আর গাছপালা জমে থাকা টোটোপাড়া গ্রাম নিয়ে।

ভারত-ভুটান সীমান্তে থাকা সুন্দর গ্রাম

WhatsApp Community Join Now

এই টোটোপাড়া খুবই সুন্দর এবং এখানকার আবহাওয়া মনোরম। এই গ্রামটি আবার ভারতের অন্যান্য গ্রামের থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ এই গ্রামে এমন কিছু মানুষ থাকেন যারা এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। গ্রামটি অনন্য কারণ এটি টোটো উপজাতির শেষ অবশিষ্ট গ্রাম। এই উপজাতিটি একটি বিশেষভাবে দুর্বল উপজাতি গোষ্ঠীর শ্রেণীভুক্ত যাকে পিভিটিজি বলা হয়।

মনে করা হয় যে বিশ্বে মাত্র ১,৭৬৩ জন টোটো সদস্য অবশিষ্ট রয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার টোটোপাড়া গ্রামে বাস করেন। এই জায়গায় এলে আপনি পাহাড়, নদী ও সর্বোপরি টোটো সম্প্রদায়ের মানুষের রহস্যময় গ্রাম দেখার সুযোগ পাবেন।  হাসিমারা স্টেশন চা বাগান পেরিয়ে আপনিও সহজেই এই টোটোপাড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন। আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাটের কাছে ভুটান সীমান্তে অবস্থিত এই গ্রাম শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং এখানে বাস করা টোটো জনজাতির জন্য বিখ্যাত।

টোটোপাড়ার ইতিহাস

এবার আসা যাক জায়গাটির ইতিহাস সম্পর্কে। টোটো সম্প্রদায়ের ইতিহাস প্রায় দুই শতাব্দী পুরনো। ১৮৬৫ সালে ইন্দো-ভুটান যুদ্ধের সময়, টোটোদের একটি গোষ্ঠী ভুটান ছেড়ে এসে বসতি স্থাপন করে ডুয়ার্স অঞ্চলে। কথিত আছে, প্রথমে কোচ রাজার রাজত্বে আশ্রয় পেলেও, পরবর্তী সময়ে তাঁরা ভুটান সীমান্তের কাছে তাদিং পাহাড়ের পাদদেশে স্থায়ী হয়। সেই সময় তাঁরা যাযাবর জীবনযাপন করতেন। ১৮৮৯ সালে জমি জরিপ করতে গিয়ে Settlement Officer D.Sunder তা-ডিং পাহাড়ের কোলে এই ছোট্ট গ্রামটি আবিষ্কার করেন। এই অঞ্চলে টোটো জনজাতি ছাড়াও মেচ, রাভা, গারো, ওঁরাও এবং নেপালিদের বসতি রয়েছে।

পাহাড়, নদী আর সবুজের এক মিলনস্থল টোটোপাড়া

এই টোটোপাড়ার সৌন্দর্য একদম যেন ছবির মতো। এখানে এলে আপনি প্রকৃতির প্রেমে পড়তে বাধ্য। গ্রামটি একদিকে ঘেরা ভুটানের তাদিং পাহাড় দিয়ে, অন্যদিকে রয়েছে ডুয়ার্সের সবুজ জঙ্গল। এখানে একটি ওয়াচটাওয়ার রয়েছে। এখানে হরিণ, বাইসনের মতো বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে।

অতি সম্প্রতি প্রশাসনের তরফে জায়গাটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতদিন টোটোপাড়ায় কোনও গাইড ছিল না। তবে প্রশাসনের তরফে সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে টোটোপাড়ায় দুটো পর্যটন সার্কিট চালু করা হচ্ছে। নেচার ট্রেইল এবং কালচারাল ট্রেইল নামে দুটো সার্কিট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটকরা।

কীভাবে যাবেন?

এবার নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এই টোটোপাড়ায় কীভাবে পৌঁছাবেন? তাহলে জানিয়ে রাখি, এর জন্য ট্রেনে হাসিমারা বা মাদারিহাটে আসুন। সেখান থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে আপনি সহজেই টোটোপাড়া পৌঁছাতে পারবেন।

সঙ্গে থাকুন ➥
X