প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গতকাল প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। আর এই ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪২৫ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৯৬ নম্বর নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের ছাত্র আদৃত সরকার। এমনকি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে পাশের হার। মেয়েদের পাশের হারও নেহাত কম নয়। আর এই আবহে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে আরও এক বাঙালি কন্যার সাফল্যের কাহিনী। যে কিনা সমাজের চিরাচরিত প্রথা ভেঙে দিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণে ছুটে চলেছেন।
‘মারি কুরি পোস্টডক’-এর তালিকায় নাম!
জানা গিয়েছে রীতুপর্না বিশ্বাস (Reetuparna Biswas) আদতে শ্যামনগরের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই সকলেই তাঁকে ‘ছোট জাতের মেয়ে’, ‘নীচু পরিবারের সদস্য’ বলে নানারকম ভাবে কটাক্ষ করত। পড়াশোনা ছোট থেকেই বেশ আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এক নীচু জাতের দরিদ্র ঘরের মেয়ে জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখাটাকে মেনে নিতে পারেনি সমাজ। তাই স্কুলে পড়াশোনা চলাকালীন চারপাশের সমাজ, পাড়া-প্রতিবেশী, এমনকি আত্মীয়স্বজনরা পর্যন্ত রীতুপর্নাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তাঁর ভবিষ্যৎ বড়জোর রেলের গ্রুপ-ডি চাকরি করা কোনও যুবকের সঙ্গে বিয়ে করে সংসার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে এবার এবার সীমাবদ্ধতাকে তুড়ি মেরে আজ সেই মেয়ে নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে পৌঁছে গেছে ‘মারি কুরি পোস্টডক’-এর তালিকায়।
রীতুপর্ণার শিক্ষাজীবন
পড়াশোনাটা শুরু হয়েছিল শ্যামনগর বালিকা বিদ্যালয় থেকে। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে, কলকাতার লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে মাইক্রোবায়োলজিতে অনার্স পড়ার সুযোগ পান তিনি। আর সেখান থেকে পড়াশোনা করতে করতেই পোল্যান্ডের ওয়ারস ইউনিভার্সিটি অফ লাইফ সাইন্স-এ বিশ্বমানের Erasmus Mundus প্রোগ্রামের আওতায় Horizon 2020 স্কলারশিপে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। আর এই স্কলারশিপে টাকার পরিমাণ কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারের বেতনের থেকেও বেশি ছিল। তাই একমুহূর্তের জন্য কিছু না ভেবে জীবনের স্বপ্ন সফলের তাগিদে নেমে পড়লেন ময়দানে। জান লড়িয়ে দিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। আর তাইতো ফলাফলস্বরূপ এক বড় জায়গায় এসে দাঁড়ালেন।
আরও পড়ুনঃ জোকা-মাঝেরাহাট মেট্রো নিয়ে বিরাট সুখবর, লাভবান হবেন হাজার হাজার যাত্রী
তবে এসবের মাঝে রীতুপর্নার জীবনে প্রেম এসেছিল বটে তবে সেই প্রেম নিয়েও শুনতে হয়েছিল কটাক্ষ। ক্লাস কামাই করে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধরা পড়ায় নানা ধরনের নোংরা মন্তব্য শুনতে হয়েছিল, এমনকি এও শুনতে হয়েছিল যে, “ছোট জাতের মেয়েদের তো এটাই হয়!” কিন্তু সেই সময় তাঁর হাত ছাড়েনি প্রেমিক অর্ঘ্য। হাতে হাত রেখে সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূর রেখে আজ তাঁরা সাংসারিক জীবনে আবদ্ধ হয়েছে। ২০১৮ সালে রীতুপর্না ইতালির সরকারি স্কলারশিপে ইউনিভার্সিটি অফ ভেরোনা থেকে পিএইচডি করেন স্টেম সেল নিয়ে। এরপর পেয়েছেন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে পেইড ইন্টার্নশিপ। সেখানে কাজ করেছেন এক নোবেল বিজয়ীর অধীনে, যিনি হার্ভার্ডের ইমিউনোলজি বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন।
পড়াশোনা ও কাজের সূত্রে ১৮টি দেশ ভ্রমণ
এরপর ২০২৩ সালে রীতুপর্না বিশ্বাস ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার থেকে জিন থেরাপি নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার চিকিৎসারও সুযোগ পান।এরপর দ্বিতীয় পোস্টডকে পেয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক মারি কুরি ফেলোশিপ। এই ফেলোশিপের আওতাতেই এবার তিনি কাজ করবেন ক্যানসার নিয়ে। পড়াশোনা ও কাজের সূত্রেই ঘুরে বেড়িয়েছেন ইউরোপের ১৮টি দেশ। দুনিয়া আজ যেন তাঁর হাতের মুঠোতে চলে এসেছে। জানা গিয়েছে খুব শীঘ্রই তিনি স্পেনে পোস্টডক করতে যাচ্ছেন। তাঁর এই সাফল্যের রাস্তাটা যে খুব একটা মসৃণ ছিল না তা তাঁর জীবনকাহিনী পড়লেই জানা যায়। তাঁর ভবিষ্যৎ যেন আরও উজ্জ্বল হয় এমনই প্রার্থনা করছে আমাদের India Hood এর গোটা টিম।
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |