‘আমার সাধ না মিটিল’র স্রস্টা, মেলেনি যোগ্য সম্মান, অল্প বয়সেই সংসারের মায়া ত্যাগ করেন পান্নালাল

Published on:

pannalal bhattacharya

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আজ কালীপুজো (Kali Puja)। সকাল থেকেই তাই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে মায়ের আরাধনায়। আর সঙ্গে বাতাসে পুজোর গন্ধের পাশাপাশি ভাসছে শ্যামা সঙ্গীত। ‘মা আমার সাধ না মিটিলো’, ‘সকলই তোমার ইচ্ছা’, এরকম বেশ কিছু পুরনো শ্যামা সংগীত আজও এই আধুনিকতার জগতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভক্তদের কাছে। কিন্তু জানেন কি এই কালজয়ী গানের স্রষ্টা পান্নালাল ভট্টাচার্য এর জীবন যুদ্ধের কাহিনী? আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে সম্পূর্ণটা পড়ে নিন বিস্তারিত।

কে এই পান্নালাল ভট্টাচার্য?

WhatsApp Community Join Now

স্বর্ণযুগের স্বনামধন্য শিল্পীদের তালিকায় অন্যতম জায়গা করে নিয়েছিল গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। দাদার মত ছোট ভাই পান্নালালেরও খুব ইচ্ছে ছিল দাদার মতো তিনিও ছায়াছবির গায়ক হবেন। সেই মতো মেগাফোন কোম্পানিতে দুটো গানও রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু তাতে কি! শচীন দেব বর্মন, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র এর কাছে তাঁর গাওয়া গানগুলি যেন ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু সেই সময় দরকার ছিল ভক্তিগীতিতে নতুন শিল্পীর। আর সেই প্রসঙ্গে দাদা ধনঞ্জয় জহুরির ভূমিকা পালন করতে উঠে পড়ে লাগলেন। তাই দেরি না করে এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানিতে গিয়ে সরাসরি জানান, ‘‘আজ থেকে এখানে ভক্তিগীতির দায়িত্ব দিন পান্নাকে। ও কোম্পানির মুখ রাখবে।’’

গান লিখে নিজে সুর দিতেন

যেমন কথা তেমন কাজ। আধুনিক, ছায়াছবির গান ভুলে অনায়াসে শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে ফেললেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। গান শুনে মনমুগ্ধ হয়ে গেল শ্রোতারা। তাইতো, আজও কালীপুজো এলে, শ্যামাসঙ্গীতের কথা উঠলে পান্নালাল ভট্টাচার্যের নাম আসে সবার মনে। বিখ্যাত এই গায়ক তাঁর জীবনে ৪০ টি শ্যামা সংগীত, ৩৬ টি আধুনিক গান এবং ৩ টি বাংলা সিনেমাতেও গান গেয়েছিলেন। কিন্তু তবুও সাফল্য কিংবা জনপ্রিয়তা ঠিক সেভাবে মিলছিল না। তিনি নিজেও গান লিখে তাতে সুর দিতে শুরু করেন। কিন্তু কখনও তিনি তার যোগ্য সম্মান পান না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে হতে হত অবহেলার শিকার। এমনকি সংসারের অশান্তিও তাঁকে গ্রাস করেছিল।

সংসারের মায়াজাল ত্যাগ করেন ৩৬ এই

এরপর জীবনের শেষ পর্যায়ে কালীঘাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাঝেমধ্যে কেওড়াতলার মহাশ্মশানে শান্তির খোঁজে যেতেন তিনি। আর মাঝে মাঝেই জীবনে সুখ শান্তির চিন্তাধারা নিয়ে নানারকম ভাবনা প্রকাশ করতেন। তবে একদিন তিনি জীবন যুদ্ধের এই সংগ্রামে নিয়ে নিলেন এক বড় সিদ্ধান্ত। সাংসারিক অশান্তির জেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন পান্নালাল ভট্টাচার্য। তখন তিনি তিন সন্তানের বাবা। সংসারের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। শেষে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তিনি মৃত্যুকেই আপন করে নিলেন। রেখে গেলেন তার কালজয়ী অমর সৃষ্টি শ্যামা সংগীতগুলি।

ভাইকে অকালে হারিয়ে সন্তান হারানোর শোকে ভেঙে পড়েছিলেন দাদা ধনঞ্জয়। তাঁর হাহাকার বেজেছে তাঁরই লেখা দুটো গানে। একটি ছিল ‘ত্রিভুবন জয় করিয়া রাবণ আনিল রত্নরাজি/ গড়েছিল তার স্বপ্ন রাজ্য পান্না যে তার নাম’ আর অপর একটি গান হল ‘থির হয়ে তুই বস দেখি মা দুটো কথা কই/ আজ আছি মা শান্ত হয়ে কাল যদি না রই’।

সঙ্গে থাকুন ➥