মানসিকভাবে শান্তি পেতে চান ? তাহলে অবশ্যই মেনে চলুন এই টিপসগুলি

Published on:

Mental Peace

Best tips to get Mental Peace: সকলেরই মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলেই সব ভালো থাকবে। স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং হতাশার সাথে লড়াই করা একটা সময়ে খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। কাজের চাপ, সম্পর্কের ফাটল এবং কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার মতো বিষয়গুলি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। তবে আর চিন্তা নেই। এই প্রতিবেদনে এমন কিছু টোটকা সম্পর্কে বলা হবে যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

১) নিজের প্রতি যত্নবান হন

সবার আগে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া জরুরি। শরীর, মন চাঙ্গা রাখতে সারাদিনের থেকে ১৫ থেকে ৩০টা মিনিট নিজের জন্য রাখুন। কিছু পড়ুন, হাঁটুন, যোগ করুন কিংবা গান শুনুন। একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। সর্বোপরি কোনো শর্টকাট নেবেন না স্বাস্থ্যের নেওয়ার সময়ে। নতুন নতুন সেলফ কেয়ারের পদ্ধতি খুঁজুন যেটা আপনার জন্য ভাল হবে। যখন নিজের যত্ন নেবেন তখন মাথায় অন্য কোনো বিষয় আনবেন না। নিয়মিত সেলফ কেয়ার স্ট্রেস হ্রাস করে, স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, আত্ম-সম্মান বাড়ায় এবং সামগ্রিক মানসিক সুস্থতা উন্নত করে। একটা স্বাস্থ্যকর জীবন লিড করতে সাহায্য করে।

২) সহায়ক সম্পর্ক তৈরি করুন

মন ভালো রাখতে বন্ধু, পরিবার কিংবা নিজের মনের মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। দৃঢ় সামাজিক সংযোগ বজায় রাখতে নিয়মিত ফোন কল, ভিডিও চ্যাট বা মিট-আপ করুন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, বলা ভালো মন চনমনে রাখতে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একজন বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখুন। কোনো ক্লাব বা গ্রুপের অংশ নিন যা আপনার শখ বা আগ্রহের সাথে একদম খাপে খাপ মিলে যায়। ভালো শ্রোতা হন। অর্থপূর্ণ কথোপকথনে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। একাকীত্ব দূর করতে নিজের বন্ধুত্বের পরিমাণ বাড়ান।

৩) মেডিটেশন করুন

আর যাই হোক না কেন, প্রতিদিন নিজের ব্যস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় বের করে অবশ্যই মেডিটেশন করুন। এতে শরীর ও মন দুইই ভালো থাকে। ফোকাস থাকা যায়। এর জন্য একটি শান্ত জায়গা খুঁজুন যেখানে আপনি আরামদায়কভাবে মেডিটেশন করতে পারেন। সারাদিনে ৫ থেকে ১০টা মিনিটের জন্য এই কাজ করুন দেখবেন শরীর-মন দুইই চাঙ্গা থাকবে। জীবনে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। ইতিবাচক সুর সেট করতে একটি সংক্ষিপ্ত মাইন্ডফুলনেস সেশন দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন। কিছু না কিছু কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। বাসন ধোয়া বা হাঁটার মতো কাজগুলি রুটিন মাফিক করুন। বেশি গ্যাজেট ব্যবহার না করাই ভালো। মেডিটেশন স্ট্রেস হ্রাস করে, সংবেদনশীল নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়, ফোকাস থাকতে সাহায্য করে।

WhatsApp Community Join Now

৪) ডায়েট ব্যালেন্স করুন

শরীর ভালো রাখতে অবশ্যই সুসম খাবার সেবন করা জরুরি। শরীর বুঝে নিজের ডায়েট প্ল্যান করুন। বিভিন্ন পুষ্টিকর ঘন খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন নিজের ডায়েটে। আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে ফলমূল, শাকসব্জী, গোটা শস্য, চর্বিযুক্ত প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করুন। পুষ্টিকর খাবার এবং স্ন্যাকস পরিকল্পনা করার জন্য প্রতি সপ্তাহে সময় আলাদা করুন। স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সমর্থন করতে সারা দিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। একটি সুষম খাদ্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, মেজাজ ভালো রাখে, সামগ্রিক শক্তির স্তর বাড়ায়।

৫) ভালো করে ঘুমান

শরীর ভালো রাখার অন্যতম মন্ত্র হল ভালো ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম যদি না হয় তাহলে শরীর কিছুতেই ভালো থাকবে না। কারণ ঘুম হল সব রোগের ওষুধ। ঘুমানোর জন্য একটা রুটিন ঠিক করুন। আলো কমিয়ে, শব্দ হ্রাস করে এবং ঘরটাকে ঠাণ্ডা করে ঘুমের দেশে তলিয়ে যাওয়া জরুরি। আসলে ঘুম-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করুন। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বই পড়ুন এবং হট শাওয়ার নিন। আরও ভাল ঘুমের জন্য এক ঘন্টা আগে ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার এড়িয়ে চলুন। ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল সেবনের ওপর রাশ টানুন। মানসম্পন্ন ঘুম স্মৃতিশক্তি একীকরণ বাড়ায়, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে, প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং সামগ্রিক মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে।

৬) নিজের গোল ঠিক করুন

জীবনে নিজের গোল ঠিক করুন। নির্দিষ্ট সময়সীমার সাথে বৃহত্তর লক্ষ্যগুলিকে ছোট, অর্জনযোগ্য পদক্ষেপে ভাগ করুন। অনুপ্রাণিত হতে এবং কাজে মনোনিবেশ করতে আপনার লক্ষ্যগুলি কোথাও আগে কোথাও লিখুন। সুস্পষ্ট এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। পর্যায়ক্রমে আপনার লক্ষ্যগুলি পর্যালোচনা করুন, সাফল্য উদযাপন করুন এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রয়োজন অনুসারে সব কাজে সামঞ্জস্য করুন। আপনার লক্ষ্যগুলি কোনও বিশ্বস্ত বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাথে ভাগ করে নিতে পারেন। লক্ষ্য নির্ধারণ অনুপ্রেরণা বাড়ায়, আত্মবিশ্বাস তৈরি করে, উদ্দেশ্য অনুভূতি সরবরাহ করে এবং ব্যক্তিগত বৃদ্ধি করে।

৭) চাপ মোকাবিলা করতে শিখুন

জীবনে স্ট্রেস রুখতে চাপ মোকাবিলা করতে শিখুন। আপনার জীবনে স্ট্রেসের উত্সগুলি ঠিক কী তা আগে বোঝা জরুরি। স্ট্রেস বা চাপ কমাতে দিনের কিছুটা সময় ঠিক করে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন, পেশী শিথিলকরণ বা সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। শান্ত এবং ফোকাস থাকতে চাপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করুন। কী করলে চাপ কমে সেই কৌশল আগে বুঝতে হবে। চ্যালেঞ্জিং সময়ে ভুল বা বিপর্যয়ের জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট মানসিক স্বাস্থ্যের উপর চাপের প্রভাব হ্রাস করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা উন্নত করে।

৮) শারীরিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকুন

স্ট্রেস কমাতে যতটা সম্ভব শারীরিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার চেষ্টা করুন। আপনার আগ্রহ এবং জীবনযাত্রার সাথে মানানসই উপভোগ্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপগুলির খোঁজ করুন। ৩০ মিনিটের একটা যে কোনও ফিসিকাল এক্সারসাইজ করুন। আপনার ওয়ার্কআউটগুলিকে আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য করতে কিছু করা জরুরি। ওয়ার্কআউটকে নিজের জীবনের একটা অঙ্গ করে তুলুন। অনুপ্রাণিত থাকতে কোনও বন্ধুর সাথে অনুশীলন করুন বা ফিটনেস ক্লাসে যোগ দিন। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এন্ডোরফিনগুলি প্রকাশ করে, মেজাজ চাঙ্গা রাখে, স্ট্রেসের মাত্রা হ্রাস করে, ঘুমের গুণমান বাড়ায় এবং সামগ্রিক শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৯) পেশাদারের সাহায্য নিন

অনেক কিছু করার পরেও আপনি যদি হতাশা, উদ্বেগ বা স্ট্রেস যদি না কমে থাকে তাহলে কোনও এক্সপার্টসের থেকে সাহায্য নিন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য নিয়মিত থেরাপি সেশনের ব্যবস্থা করুন। থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাথে পর্যায়ক্রমে আপ টু ডেট থাকুন। থেরাপি সেশনগুলি থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে আপনার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে উন্মুক্ত এবং সৎ থাকুন। ওষুধ বা থেরাপিউটিক কৌশল সহ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের প্রস্তাবিত চিকিত্সা টিপসগুলি ভালো করে মেনে চলুন।

১০) ইতিবাচক থাকুন

জীবনে আর যাই হয়ে যাক না কেন, সবসময় ইতিবাচক থাকুন। জীবনে নেগেটিভিটি আসতে দেবেন না, এতে আপনারই ক্ষতি। সারাদিনের মধ্যে কিছুটা সময় বের করে একটা খাতায় প্রতিদিন তিনটি জিনিস লিখুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলিকে বাস্তববাদী, ইতিবাচক নিশ্চয়তা বা দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে চ্যালেঞ্জ করুন। দিনের শুরু থেকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং কৃতজ্ঞতার মুহুর্তগুলি প্রতিফলিত করার জন্য কিছু করুন। প্রিয়জন এবং বন্ধুদের কাছে মৌখিকভাবে বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রশংসা প্রকাশ করুন। যখনই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, সচেতনভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় চেষ্টা করুন।

সঙ্গে থাকুন ➥
X