প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রীর বাংলা আবাস যোজনার (Banglar Bari) প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ইতিমধ্যেই দেওয়া শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অনেকেই অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি নির্মাণের কাজে লেগে পড়েছে। অনেক গরীব মানুষের এই প্রকল্পে নানা সুবিধা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হল স্বর্ণখালির বিড়ি শ্রমিক বৃদ্ধার পরিবার। কিন্তু সেই সুবিধা পেতেই বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হল পরিবারকে। বিডিও র পাঠানো নোটিশে মাথায় বজ্রাঘাত পড়ল।
আবাসের টাকা হাতে পেতেই নোটিশ বিডিও-র!
সূত্রের খবর, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালি গ্রামের বৃদ্ধ বাসিন্দা রঞ্জিত বিশ্বাস। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী সুচিত্রা বিশ্বাস দুজনেই বিড়ি শ্রমিক। ছেলের পাকা বাড়ি থাকলেও সেই বাড়িতে থাকেন না তাঁরা। বিড়ি বেঁধে কোনওরকমে সংসার চালান। মাত্র দুই শতক জমির ওপরে টিনের ঘরে বসবাস ছিল তাঁদের। ঘর বানানোর জন্য সেই টিনের চালাটা বিক্রি করে দেন ৪০০০ টাকায়। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে কৃষ্ণগঞ্জ বিডিও এর তরফে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল এই বৃদ্ধ দম্পতিকে। সেই নোটিশে জানানো হয়েছিল যে, “আপনি বাংলার বাড়ি গ্রামীণ প্রকল্পে গৃহনির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, আপনার বাড়ি পাকা থাকা সত্ত্বেও ভুল তথ্য দিয়ে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আবেদন করেছেন।”
নোটিশে আরও লেখা হয়েছে যে আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকার থেকে প্রাপ্ত সেই ৬০ হাজার টাকা যেন বিডিও অফিসের অ্যাকাউন্টে অথবা নগদ অর্থে যেন জমা করে দেওয়া হয়। অন্যথায় সরকারি দফতরকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে বৃদ্ধ দম্পতির নামে FIR দায়ের করা হবে। আর এই নোটিশে রীতিমত মাথায় হাত বৃদ্ধ দম্পতির। এদিকে আবাস যোজনার ঘর নির্মাণের জন্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমস্ত টাকা দিয়ে ইট, বালি, সিমেন্ট কিনেছে। কীভাবে এখন সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তার উপর বিডিও অফিস থেকে বারবার টাকা ফেরত এর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি প্রকল্পে লাগল রাজনীতির রং
এমনকি FIR এর ভয়ে পরিবারের লোকজন বাগানে আশ্রয় নিয়েছেন। এই কাণ্ড দেখে অবাক সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমে পঞ্চায়েত, পরে বিডিও এবং শেষে থানা এনকোয়ারি করে, তবেই এই পরিবারকে বাংলার বাড়ি দিয়েছেন। তাহলে কেন এই ধরনের নির্দেশ? যদিও সেখানেও উঠে এল রাজনীতির রং। বিডিও এর এই নোটিশের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ দম্পতির দাবি, তাঁরা বিজেপি সমর্থক হওয়ায় তাঁদের প্রতি এ ধরনের আচরণ করছে শাসকদল। তবে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাকলি দাস। এমনকি কৃষ্ণগঞ্জের বিডিও সৌগত সাহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও এই ব্যাপারে মুখ খোলেননি।