প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কয়েক মাস আগে বসিরহাটে (Basirhat) একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছিল। ঘটনার কেন্দ্রে ছিল শেখ শাহজাহান। উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা বসিরহাট এলাকা। আর সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক ‘শেখ শাহজাহান’ এর নাম করলেন বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাস ববি। তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সম্পাদক ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শাহানুর মণ্ডলকে (Sahanur Mondal) ঘিরে উঠে এল চাঞ্চল্যকর সেই অভিযোগ। কীভাবে একসময়ের ভ্যানচালক শাহানুর আজ কয়েকশো কোটি টাকার মালিক এবং সাম্রাজ্যের অধিকারী হলেন তা নিয়েও প্রশ্ন ঘনাচ্ছে রাজনৈতিক অন্দরে।
বিস্ফোরক দাবি বিজেপি নেতার
বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাস ববি নিজের ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, বসিরহাটের কুখ্যাত পাচারচক্রের হোতা বারিক বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ অনুগামী হলেন বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার শাহানুর মণ্ডল। এক নাম, এক পরিবার, এক সিন্ডিকেটের উপর ভর করেই চলছে তাঁর সাম্রাজ্যের দাপট। বড় ভাইয়ের দখলে রয়েছে অন্তত ১৫টি ইটভাটা, ভাই সাহারাপ এখন পঞ্চায়েত প্রধান, ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোলাম মোস্তফা গাজীও একই পদে রয়েছেন। আর বাকিটা সামলাচ্ছে শাহানুরের নিজস্ব বাহিনী। একেবারে সাম্রাজ্য বিস্তার করে তুলেছে গোটা পরিবার। ববির আরও অভিযোগ, জমি দখল থেকে রাস্তার টেন্ডারে কাটমানি, কৃষক মান্ডি সিন্ডিকেট থেকে কালোবাজারি রেশন দুর্নীতি, গরু পাচার, ব্ল্যাকমেল, এমনকী সাধারণ মানুষকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো, আড়ালে সবই সংগঠিত চক্রের মাধ্যমে চলছে।
অঘোষিত শাসক শাহানুর মণ্ডল!
গেরুয়া শিবিরের নেতা অভিজিৎ দাস ববির দাবি, “ শাহানুর মণ্ডল ধীরে ধীরে গোটা বসিরহাট নিজের কবলে নিয়ে আসতে চাইছে। যেভাবে কয়েক মাস আগে সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভায় অঘোষিত শাসক হয়ে উঠেছেন শাহানুর মণ্ডল। এমনকি পুলিশের একাংশ এই শাহানুরের নিয়ন্ত্রণে, ফলে কোনো দুর্নীতি বা আইন বিরুদ্ধ কাজ চোখের সামনে দেখলেও, প্রশাসন কার্যত নির্বিকার হয়ে পড়েছে।” ইতিমধ্যেই শাহানুর মণ্ডলের দাপট ভাঙার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি তোলার পাশাপাশি অভিজিৎ দাস ববি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআইয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তাঁর দাবি, “অবিলম্বে তদন্ত শুরু না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।”
আরও পড়ুন: খরচ ২৬২ কোটি! ১২.৬ একর জমিতে শুরু হল মমতার স্বপ্নের ‘দুর্গা অঙ্গন’ তৈরির কাজ
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের শুরুতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে যাওয়ার সময় ইডি ও আধাসেনা জওয়ানদের উপর হামলার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই সময়ই সামনে আসে কৃষিজমি দখল, ভেড়ির লিজ ঘিরে টাকার জালিয়াতি-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ। স্থানীয় মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। যদিও সেই বেতাজ বাদশা এখন জেলবন্দী। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার জামিনের আবেদন করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। কিন্তু প্রতিবারই তাঁর আর্জি নাকচ হয়েছে।