প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: খবরের কাগজ খুললেই পাতা জুড়ে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কিন্তু প্রশাসন সম্পূর্ণ নীরব। সমাজ যতই উন্নতমূলক কাজ করুক না কেন, দিন শেষে সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে একেবারে শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। বেড়েই চলেছে ধর্ষকদের দাপট। এমতাবস্থায় বীরভূমে (Birbhum) তৃণমূলের এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে উঠে এল ধর্ষণের অভিযোগ। আর সেই অভিযোগকে ঘিরেই শুরু হয়েছে হইচই কাণ্ড।
ঠিক কী ঘটেছে?
রিপোর্ট অনুযায়ী, বীরভূমের রামপুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর প্রিয়নাথ সাউ ওরফে টিংকুর বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং ধর্ষণের অভিযোগ উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করে এক তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ওই কাউন্সিলর। ধর্ষণের ফলে তরুণী গর্ভবতী হয়ে এক সন্তানের জন্মও দেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নির্যাতিতা তরুণী রামপুরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যেখানে ধর্ষণ, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ করা আছে।
বিস্ফোরক অভিযোগ তরুণীর
নির্যাতিতা তরুণীর দাবি, “২০১৫ সালে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গিয়ে প্রিয়নাথ সাউয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ভোটার কার্ডের কাজে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে তিনি তরুণীকে নিজের বাড়িতে ডেকে নেন। তারপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। ২০২০ সালে যখন আমি আমার পরিবারকে এই সম্পর্কের কথা জানাই, তখন আমার পরিবারের সঙ্গেও অভিযুক্ত কাউন্সিলর দেখা করেন। কিন্তু বিয়ের তারিখ ঠিক করার সময় তিনি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু পা হটেন এবং জানান তিনি বিবাহিত। তাঁর সন্তানও আছে।” কিন্তু তরুণী গর্ভবতী হয়ে পড়লে ওই কাউন্সিলর তাঁকে হুমকি দেয় সন্তান নষ্ট করার।
অভিযোগ অস্বীকার কাউন্সিলরের
এদিকে নির্যাতিতা তরুণীর ধর্ষণের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর প্রিয়নাথ সাউ। তিনি দাবি করেছেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রামপুরহাট থানা সূত্রে খবর, তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু হয়েছে ও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রামপুরহাট ও আশপাশের এলাকায়। অন্যদিকে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরও গতকাল অর্থাৎ বুধবার অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে রামপুরহাটের দলীয় কার্যালয়ে দলের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার ও রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
আরও পড়ুন: SIR-র জন্য BLO কবে বাড়ি আসবেন? না থাকলে নাম কাটা যাবে? মিলল জবাব
পাল্টা খোঁচা বিজেপির
শাসকদলের এই অপকর্ম প্রকাশ্যে আসতেই চুপ থাকেনি বিরোধী দল। বিজেপি এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে, “ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এই ধরনের ঘটনার পরে একজন কাউন্সিলরকে কী ভাবে তৃণমূল কলকাতা থেকে জেনে বা না জেনে, খোঁজ না নিয়ে বা খোঁজ নিয়েই টাউনের সহ-সভাপতি করল। যারা ধর্ষক তারা এই ধরনের সুযোগসুবিধা পাচ্ছে বলে সমাজে এদের এত দাপট। তাইতো প্রতি মুহূর্তে আমাদের মা-বোনেরা ধর্ষিতা হচ্ছেন। এবং সমাজে ধর্ষকেদের সম্মান দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় যারা যুক্ত আছে প্রত্যেকেই গ্রেফতার করতে হবে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। আমরা তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।”












