প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। তাই ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বেশ সরগরম রাজনৈতিক দলগুলি। এমতাবস্থায় অর্থের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন তোলার মারাত্মক অভিযোগ উঠল কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় দিল্লি হাইকোর্টও (Delhi High Court) মুখ ফেরাল মহুয়ার থেকে। খারিজ করে দিল তাঁর আবেদন। যার দরুন জয়ের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।
ঘটনাটি কী?
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে লোকসভা স্পিকারের কাছে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এক বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে এসেছিল কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি ছিল, এক শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় মোটা অঙ্কের অর্থ ও সুবিধা গ্রহণ করে, মহুয়া লোকসভায় প্রশ্ন পেশ করেছিলেন। বিজেপি সাংসদ ছাড়াও প্রাক্তন এক আইনি পরামর্শদাতা জয় আনন্দ দে-ও একটি হলফনামা দিয়ে দাবি করেন, তিনি নিজে চাক্ষুষ দেখেছেন যে কীভাবে মহুয়া একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর হয়ে প্রশ্ন পাঠানো হচ্ছে সংসদে। আর এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই সংসদীয় নীতি-নৈতিকতা কমিটি একটি তদন্ত শুরু করে। শুধু তাই নয় কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের সাংসদের এই বিষয়টি লোকপালও হস্তক্ষেপ করে।
দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ মহুয়া
এদিকে কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের সাংসদের বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছেন মহুয়া মৈত্র। তিনি শুরু থেকেই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করে আসছেন। এমনকি তিনি লোকসভার নৈতিকতা কমিটিকেও একাধিকবার পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে রাজনৈতিকভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। যা এ গিয়েছে আগামী ৬ অক্টোবর ভারতের লোকপাল-এর দপ্তরে এই মামলার শুনানি রয়েছে। এদিকে সেই শুনানি যাতে না হয় কিংবা আপাতত স্থগিত থাকে এই উদ্দেশ্যেই দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। কিন্তু সেই আবেদন এবার খারিজ করল আদালত।
আবেদন খারিজ হাইকোর্টের
গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল এবং বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথ শঙ্করের ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি। সেই সময় তৃণমূলের সাংসদের হয়ে আইনজীবী সমুদ্র সাড়ঙ্গীও আদালতের কাছে মহুয়ার দাবি সংক্রান্ত নানা নথি পেশ করেন। তাঁর যুক্তি, ‘লোকপালে চলা শুনানিতে পেশ হওয়া একাধিক গোপন তথ্য নিশিকান্ত দুবে জনমানসের সামনে তুলে ধরেছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই পরবর্তী শুনানি হওয়া উচিত নয়।’ কিন্তু সেই আবেদন সম্পূর্ণ খারিজ করে দেয় আদালত। স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় যে, “মামলার এই পর্যায়ে এসে কোনও রকম স্থগিতাদেশ জারি করা হাইকোর্টের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সাংসদ তাঁর আবেদন নিয়ে লোকপালের কাছে দ্বারস্থ হতে পারেন।’
আরও পড়ুন: পুজোর মধ্যেই অঘটন! ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে লাইটের গেট ভাঙল বারাসত-দুর্গাপুরে
এদিকে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের জেরে স্বভাবতই বেশ চাপে পড়েছেন তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তার উপর তাঁকে আরও চাপে ফেলার জন্য নিশিকান্ত দুবে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “সত্যের জয় হল। আইন নিজের পথে এগোচ্ছে। এখন দেশের সামনে আসবে সমস্ত কুকর্ম।” তবে বিপদের সময় মহুয়ার পাশে রয়েছে নিজের দল। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “যারা মানুষের প্রশ্ন তুলে ধরছেন, তাদেরই দমন করতে চাইছে কেন্দ্র। মহুয়া মৈত্রর পাশে আমরা আছি।” এখন দেখার পালা ৬ অক্টোবর লোকপালের শুনানি কোন পর্যায়ে পৌঁছয়।