প্রীতি পোদ্দার, ভাটপাড়া: রাজ্যের প্রতিটি সরকারী প্রকল্পের কাজ যথা সময়ে শেষ করার জন্য বারবার সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্য নবান্নে বৈঠকও করা হয়েছিল। সমস্ত জেলাশাসককে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আসলে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের মার্চে। তাই তার আগেই সমস্তটা শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নবান্নের তরফ থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনও এই কমিশনের বরাদ্দ টাকা খরচ হয়নি বিভিন্ন জেলায়। আর এবার সেই তালিকায় নাম উঠে এল ভাটপাড়া পুরসভার নাম।
বেশ কিছুদিন ধরে ভাটপাড়া পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ঠিক মতো পেনশন না পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। শুধু তাই নয় ওই এলাকায় নাগরিক পুরসভা, বহুতলের সমাপ্তি শংসাপত্র নিয়েও নানা বাকবিতণ্ডা শুরু হয়েছিল। জানা গিয়েছে বহুতলের সমাপ্তি শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে গত শুক্রবার বোর্ড মিটিংয়ে বিবাদ বাধে পুর পারিষদ-দের একাংশের মধ্যে । অভিযোগ উঠছে প্ল্যান কমিটিকে এড়িয়ে অনৈতিকভাবে বিল্ডিংয়ের সিসি দেওয়া হচ্ছে। যার চরম বিরোধিতা করে সেদিন বোর্ড মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন পূর্ত বিভাগের পুর পারিষদ অরুণ ব্রহ্ম । তার পরে তিনি আর মিটিংয়ে ফিরে আসেননি। ফলে একের পর এক নাগরিক উদ্যোগে গাফিলতি দেখা দিতে লাগল।
ফেরত গেল পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা
শুধু বহুতলের শংসাপত্র নয়, ওই পুরসভায় এবার টেন্ডার ছাড়াই দুটি মিলের জমিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ব্যয়ে ফেন্সিং করার অভিযোগও উঠেছে পুর কর্মীদের বিরুদ্ধে। এর আগে, ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকার হিসেব ঠিক মতো দিতে না মেলায় এবং ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটও সঠিক সময়ে জমা দিতে না পারায় ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষে বরাদ্দকৃত এই বিপুল টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। তার জেরে এবারও পুরসভার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা ফেরত চলে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই বিষয় মানতে একদমই রাজি হচ্ছে না পুর কর্তৃপক্ষ।
কী বলছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান?
পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবজ্যোতি ঘোষ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “এরকম একটি খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যদি সত্যিই এমনটা ঘটে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়ে আবারও আবেদন করা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কোনও টাকা বরাদ্দ করা হয়নি বলে শেষ আপডেট পাওয়া গিয়েছে। যদি কোথাও খামতি থেকে থাকে, তাহলে সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” অন্যদিকে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের নিরিখে, অবনমন হল বীরভূম জেলা পরিষদের। তৃতীয় থেকে একাদশে নেমে এল এই জেলা।
জানা গিয়েছে ৫০ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি বীরভূম জেলা পরিষদ। এই অবনমনের কারণ হিসেবে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতী কাজল শেখ জানিয়েছেন, “আমরা কোনও জায়গায় কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তবে হয়ত কোনও জায়গায় কোনও দুষ্ট চক্র কাজ করছে। তারা কাজ করতে পারছে না বলে এই বদনাম করার চেষ্টা করছে।” অন্যদিকে পঞ্চদশ অর্থ কমিনের টাকা খরচের নিরিখে একেবারে শীর্ষে রয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদ, এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে দার্জিলিং জেলা পরিষদ।