প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন (Delhi Election) সম্পন্ন হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আজ অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশ হওয়ার কথা। তাই সকাল থেকেই উত্তেজনা বেশ তুঙ্গে। কারণ আজ দেড় কোটিরও বেশি দিল্লিবাসী নির্ধারণ করতে চলেছে কোন দলের হাতে থাকবে দিল্লির সিংহাসনের ক্ষমতা।
বিজেপি বনাম আপ | BJP Vs AAP
আজ সকালে দিল্লিতে ভোটের গণনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রাথমিক ট্রেন্ডে খানিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে, আম আদমি পার্টি এবার হয়ত বিজেপির কাছে হারাতে পারে। এক্সিট পোলের হিসেবেও দেখা যাচ্ছে বিজেপি সকলের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তবে এক্সিট পোলের সমীক্ষাকে পাত্তা দিতে রাজি নয় আম আদমি পার্টি। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৬২ টি আসন জিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছিল আম আদমি পার্টি তথা আপ। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র আট আসন। কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি। এবারের নির্বাচনেও উঠে এসেছে ত্রিমুখী লড়াই। কিন্তু সেই লড়াইয়ে বিজেপি বনাম আপ-ই এবার মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
একদিকে যেমন ২৭ বছরের খরা কাটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির ঠিক তেমনই আবার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা দখল করতে একেবারে মাটি কামড়ে রেখেছে আম আদমি পার্টি তথা আপ। সেক্ষেত্রে তাই বার বার একটি প্রশ্ন মাথা চারা দিয়ে উঠছে। আর সেটি হল ২৭ বছর পর বিধানসভা নির্বাচনে কীভাবে এতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। যেখানে দিল্লিতে গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দুই অঙ্কের ভোটও তাঁদের ভোট ব্যাঙ্কে পায়নি সেখানে তাহলে তাঁরা এবার এমন কী করল যে পুরো চিত্রটাই এক নিমেষে বদলে গেল। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনার মাধ্যমে অবশেষে উঠে এল বেশ কিছু কারণ।
বিজেপির অভ্যুত্থানের পিছনে মূল কারণগুলি কী কী?
দিল্লি নির্বাচনে প্রথম থেকেই এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। এমনকী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অতিশী, মণীশ সিসোদিয়ার মতো আপ হেভিওয়েটরা কড়া লড়াইয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। সেক্ষেত্রে এবার বিজেপির এই নির্বাচনে উন্নতির বেশ কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। সেগুলি হল।
দলনেতার জনপ্রিয়তা
বিজেপি তথা ভারতীয় জনতা পার্টির দলনেতা তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব এবং জনসভায় তাঁর বক্তৃতা বেশ আকৃষ্ট করেছে সকলকে। যেটা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে খুব একটা বেশি দেখা যায়নি। যার ফলে বেশ কিছু সাধারণ মানুষ বিজেপিমুখী হয়েছে। এবং চারিদিকে নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের তৎপরতার বিজেপির সুনাম যেন তরতরিয়ে বাড়ছে।
বিরোধী দলের মধ্যে মতপার্থক্য
বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে যে ইন্ডিয়া জোট গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে বিশেষ করে অন্যতম দুই দল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা গিয়েছে। যা বিজেপির শক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এবংসুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে।
সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত করা
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তার সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কর্মকর্তা এবং সাংসদদের বিভিন্ন বিধানসভা নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা দলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল সকলের কাছে। এটি একপ্রকার ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এক অন্যতম কৌশল বলা যায়।
স্থানীয় সমস্যাকে প্রাধান্য দেওয়া
বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় দিল্লির বেশ কিছু স্থানীয় সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করা হয়েছিল। এবং দিল্লির উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা ভোটারদের আস্থা অর্জনে সহায়তা করেছে। আর এই ক্ষেত্রে সমর্থকদের “দিল্লিকে অরাজকতা থেকে বাঁচাও” স্লোগান দিয়ে আরও অনুপ্রাণিত করা হয়েছিল। বিজেপি তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল যার ফলে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি অংশের কাছ থেকে বড় সমর্থন মিলেছিল।
নির্বাচনী প্রচারে ইতিবাচক ধ্যানধারণা
গেরুয়া শিবির দিল্লিতে উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে চারিদিকে ইতিবাচক নির্বাচনী প্রচারণার পথ বেছে নিয়েছিল। যার ফলে জনগণের মধ্যে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। এবং দিল্লিতে বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণায় বড় বড় দাপুটে নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মতো জাতীয় স্তরের নেতাদের সম্পৃক্ত করেছিল। এছাড়াও দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর উন্নয়নের ভূমিকা নিয়েও বেশ কিছু ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি প্রচার করা হয়েছিল।